ছেলের আশায় ২ কোটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ মেয়ে, কোন দেশে জানেন?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শুধু ছেলেসন্তানের আশায় ভারতের মা-বাবারা দুই কোটি ১০ লাখ ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ মেয়েশিশুর জন্ম দিয়েছেন।

দেশটির এক সরকারি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১৭-১৮ সালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের অনেক দম্পতিই ছেলেসন্তান না হওয়া পর্যন্ত সন্তান ধারণ করতে থাকেন। ফলে জন্ম নেয় ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ মেয়েশিশু। দেশটিতে গর্ভাবস্থায় লিঙ্গ নির্ধারণ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে গর্ভপাতের সংখ্যা হয়তো কিছুটা কমেছে। তবে তাতে মেয়েশিশুদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি, ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত হিসেবেই বেড়ে উঠতে হয় তাদের। আর ছেলেসন্তানের প্রতি এই আকাঙ্ক্ষাকে সেখানকার সমাজের প্রতিফলন হিসেবেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ হওয়ার পরও যৌন নির্ধারণী গর্ভপাত, অপুষ্টি, সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়া এবং অবহেলার কারণে ভারতের জনসংখ্যা থেকে হারিয়ে গেছেন অন্তত ছয় কোটি ৩০ লাখ নারী।

ভারতে ছেলেদের অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো দেশটির আইন অনুযায়ী সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পায় ছেলেসন্তান। মেয়েসন্তানের বিয়ের সময় তার জন্য উল্টো মোটা অঙ্কের যৌতুক গুনতে হয় পরিবারকে। বিয়ের পর বাবার বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে চলে যায় মেয়েরা।

ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মানুষের মধ্যে ছেলেসন্তানকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে সবচেয়ে কম মেঘালয়ে। অর্থাৎ পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাতের হার মেঘালয়ের চেয়ে বেশি।

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে এক হাজার ২০০ ছেলেশিশুর বিপরীতে একই বয়সী মেয়েশিশুর সংখ্যা এক হাজার।

টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বহু নারীকে এখনো ছেলেসন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য চাপে থাকতে হয়। অন্যদিকে ছেলের আশায় জন্ম নেওয়া অনেক দরিদ্র পরিবারের মেয়েশিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না, যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।

২০১১ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেট জানায়, এর আগের তিন দশকে ভারতের অন্তত ১২০ মিলিয়ন মেয়েশিশুকে ভ্রুণ অবস্থাতেই হত্যা করা হয়েছে।