চোখ খুলে প্রথমে বাংলাদেশকেই দেখল আবু বক্কর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাপ-দাদা সবার জন্ম মিয়ানমারে। তার জন্মও সেখানেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। স্বয়ং বিধাতাও চায়নি চোখ খুলে মিয়ানমারের ‘নরক’ দেখুক শিশুটি। গর্ভের সন্তানকে নিয়ে কোনো মতে বাংলাদেশে এলেন মা। আর বাংলাদেশে ঢুকতেই পৃথিবীতে এলো ফুটফুটে শিশুটি। চোখ খুলে প্রথমে বাংলাদেশকেই দেখল আবু বক্কর সিদ্দিকী।

আবু বক্কর সিদ্দিকী নামটি রেখেছেন তার নানী। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন আবু বক্করের মা নুরুস সাবা। সীমান্ত পার হওয়ার সময় প্রসব বেদনায় ওঠে সাবার। তখনই তার সাবার মাসহ অপরিচিত কয়েকজন নারী তাকে শাড়ি দিয়ে ঢেকে ফেলে। এরপরই বাংলাদেশের সীমান্তে আবু বক্করের কান্নার ধ্বনি শুনতে পান মা সাবা।

 মা সাবা জাগো নিউজকে বলেন, আমি জানি একবার প্রসব হয়ে গেলে শিশুকে নিয়ে চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হবে। মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম বাংলাদেশে যেন ওর জন্ম হয়। কোনোভাবে মিয়ানমার থেকে বের হয়ে শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ ঢুকতেই ব্যথায় প্রায় অচেতন হয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর ওর কান্নায় সব কষ্ট ভুলে যাই। সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় আমার।

ক্যাম্পের অন্য সদস্যরা অনেক অস্বস্তি আর ভীত থাকলেও শিশুকে কোলে নিয়ে তার মুখের দিকে চেয়ে হাসছিলেন মা সাবা।

আবু বক্করের বাবা আলী জোহার মিয়ানমারের পাঞ্জিতে ব্যবসা করতেন। একসঙ্গে বাংলাদেশের পথে রওনা হলেও রাত পেরিয়ে ভোর হলে তাকে আর খুঁজে পাইনি। এখানে ক্যাম্পেও খুঁজেছি। এখনও সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি তিনি।

আবু বক্করের মতো বাংলাদেশে আসার পথে এমন অসংখ্যক প্রসূতি মা সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এদের আরেকজন রেহানা বেগম। ‘হিংস্র’ মিয়ানমারের ওয়ালাদং পাহাড়ের ঢালে জন্ম দিয়েছেন ফুটফুটে কন্যা সন্তান। নাম রেখেছেন সঞ্চিতা।

রেহানার সন্তান প্রসবের তারিখ যখন ঘনিয়ে আসছিল, তখন মিয়ানমারের চলছিল ধরপাকড় আর নির্মম নির্যাতন। একে একে তার পরিবারের সব পুরুষ যখন আটক হচ্ছিল তখনই বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেয় রেহানা। শাশুড়িকে নিয়ে রওনা হন, স্বামী তখন কোথায় সেই খবরও নেই।

১০ সেপ্টেম্বর রাতের আধারে পাহাড়ে হাটার সময় হঠাৎ ওয়ালাদং পাহাড়ে এসে প্রসবের বেদনা ওঠে তার। শাশুড়ি আর অপেক্ষা না করে তাকে পাহাড়ের ঢালে নিয়ে যান। সেখানে রেহানা জন্ম দেন ফুটফুটে কন্যা সন্তান। দুই দিন দুই রাত পাহাড়ের নিচে গুহার মধ্যে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসেছেন।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সুখী নারীদের মধ্যে অন্যতম রেহানা। ক্যাম্পে কেমন লাগছে। জানতে চাইলে বলেন, ‘ভয়ভীতির মাঝেও সন্তানের চেহারা দেখে খুশি আমি।’

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আব্দুস সালাম বুধবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে অবস্থানরত ১৭ হাজার অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গা নারী তাদের তত্ত্বাবধানে আছেন। তাদের সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত তারা ২০০টি ডেলিভারি সম্পন্ন করেছেন। মা ও সন্তান উভয়ই ভালো আছেন।

জাগো নিউজ