চাঁ.গঞ্জে খাটাল মালিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট চরধরমপুরে বিট বা খাটাল মালিকদের বিরুদ্ধে গরু-মহিষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি জোড়া গরু-মহিষের জন্য ১১শ’ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও জোর করে খাটাল মালিকরা ৯ হাজার টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খাটাল মালিকরা। এদিকে, ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় জেলা প্রশাসন।

গরু ব্যবসায়ী সোনা মিয়া, সাইফুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলামসহ আরও অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা না দিলে খাটাল মালিকরা আমাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান এবং হয়রানি করেন। এছাড়া খাটালের নিরাপত্তার অভাবে প্রায়ই গরু চুরি হয়। ফলে গরু ব্যবসায়ীদের লোকসান দিতে হয়।’

তবে চরধরমপুর খাটালের পরিচালক আল-মামুন হক পথিক বলেন, ‘সদ্য চালু হওয়া এ খাটালে কিছু ক্রুটি-বিচ্যুতি আছে সত্য। কিন্তু জোর করে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা।’

জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে গরু আনতে হতাহতের সংখ্যা রোধ এবং শুল্ক ফাঁকি কমাতে বিট বা খাটাল প্রথা চালু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যেখানে প্রতিদিন ভারত থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার গরু আনার নিয়ম বেধে দেওয়া হয়। বিজিবি সদস্যরা প্রথমে ব্যবসায়ীদের টোকেন দিয়ে গরুগুলো খাটালে রাখেন। পরে কাস্টমস শুল্ক আদায় করে ব্যবসায়ীদের গরু বাজারে নেওয়ার অনুমতি দেয়। এরই অংশ হিসেবে ভোলাহাটের চরধরমপুর খাটালের মালিকরা উচ্চ আদালতের রিটের আদেশ বলে গত ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় গরু-মহিষ আনা শুরু করেন। কিন্তু খাটালে সরকারি নিয়ম উপেক্ষা ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন খরচের নামে অতিরিক্ত এ টাকা আদায় করছেন বিট মালিকরা।

গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, ‘চরধরমপুর খাটাল থেকে প্রতি জোড়া গরু বা মহিষের কাস্টমস ছাড়পত্র পেতে এক হাজার এবং খাটালের খরচ বাবদ একশ টাকা পরিশোধ করার নিয়ম। তবে এ খরচ দেওয়ার পর বিভিন্ন খরচের নামে জোড়া প্রতি অতিরিক্ত আরও সাত হাজার ৯শ’ টাকা নিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাটাল মালিকদের সিন্ডিকেট বিভিন্ন খরচের নামে এক জোড়া গরু-মহিষ থেকে সাত হাজার ৯শ’ টাকা অতিরিক্ত হিসেবে প্রতিদিন দুই হাজার গরু মহিষে ৭৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ পেলেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।’

ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরোজ হাসান জানান, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিট/খাটালের শর্তানুযায়ী একজন বিট মালিক গরু প্রতি ৩০ টাকা সার্ভিস চার্জ ও বিটে গরু থাকা বাবদ ২০ টাকা করে পাবেন। আর কাস্টমসের ছাড়পত্র বাবদ একটি গরুতে ৫শ’ টাকা রাজস্ব পাবে সরকার।’

তবে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে কোনও কথা বলেননি তিনি।

এদিকে সরেজমিনে খাটাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রতিদিন দুই হাজার গরু আনার নিয়ম থাকলেও অতিরিক্ত গরু আনছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে শুল্ক ফাঁকিরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে শুল্ক ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. রাশেদ আলী বলেন, ‘অতিরিক্ত ভারতীয় গরু পরের দিন এন্ট্রি দেখিয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে।’

জানা গেছে, চলতি মাসে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনায়ারুল ইসলাম খাটালে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি উত্থাপন করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. এরশাদ হোসেন খান বলেন, ‘ওই বিটে কোনও ধরনের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন