চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় চামড়ার মজুদ, ভারতে পাচারের আশঙ্কা

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা পাচারের জন্য চামড়া মজুদ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চামড়া পাচার ঠেকাতে সীমান্তের কড়া সতর্কতা শিথিল করা হলেই এসব চামড়া ভারতে পাচার করে দেয়া হবে বলেও দাবি করেছে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। সীমান্ত এলাকায় চামড়ার মজুদের কারণে আশানুরূপ চামড়া কিনতে পারেনি জেলা সদরের ব্যবসায়ীরা।
জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অন্য বছর ঈদের দিনই সীমান্ত এলাকার কোরবানীর পশুর চামড়া জেলা সদরে আনা হয়েছিল আড়তে বিক্রির জন্য। কিন্তু এবার তেমন একটা আনা হয়নি। ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দিনও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় কোরবানীর পশুর বেশির ভাগ চামড়া আনা হয়নি। ওই সব চামড়া স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা সংরক্ষণ করে রেখেছেন।

 

ব্যবসায়ী ও সীমান্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এখনো চমড়াগুলো পাচার করা হয়নি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি সদস্যদের কড়া সতর্কতার কারণে এখনো সেগুলো ভারতে নিয়ে যেতে পারেনি তারা। সতর্কতা শিথিল হলে বা সতর্ক অবস্থাতেও সুযোগ পেলে  সেগুলো পাচার করা হবে।
সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুসন্ধানে জানাগেছে, প্রতিবছরই জেলার বেশ কিছু সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার করা হয়। তবে এ বছর তুলনামূলক একটু বেশিই পাচারের প্রস্তুতি নিয়েছে চোরাচালানীরা। এর প্রধান কারণ হল দেশে চামড়ার দাম কম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি, বাখেরআলী, জোহরপুর, শিবগঞ্জের মাসুদপুর, মনোহরপুর, ভোলাহাটের জেকে পোলাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে চামড়ার পাচার বেশি হয়। এ সব সীমান্ত দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় চামড়া। আলাতুলি, বাখেরআলী, জোহরপুর, মাসুদপুর, মনোহরপুর সীমান্তে পদ্মা নদীরে এপারে বাংলাদেশ আর ওপারে ভারত। অন্যদিকে ভোলাহাটের সীমান্তে মহানন্দা নদীর এপারে বাংলাদেশ ওপারে ভারত। তাই এ সব সীমান্ত দিয়ে নৌকাযোগে চামড়া পাচার করা অনেক সহজ।

 
সীমান্ত এলাকা থেকে আশানুরূপ চামড়া না আসার কথা স্বীকার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মঞ্জুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকাতেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়াগুলো লবন দিয়ে সংরক্ষণ করেছেন। তবে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকার কারণে সেগুলো পাচার করা অতটা সহজ হবে না।

 
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রধানত দুটি কারণে ভারতে চামড়া পাচার হচ্ছে। এরমধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশে চামড়ার দাম কম। এবার সরকারিভাবেই ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৪০ টাকা নির্ধারন করে চামড়া ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারন করে ২০ টাকা। ভারতে চামড়ার দাম এর চেয়ে প্রায় দিগুন। এছাড়া চামড়া পাচারের আরেকটি কারণ হচ্ছে ঢাকার ট্যানারীগুলো বকেয়া পরিশোধ না করা। ব্যবসায়ীদের দাবি, ট্যানারী স্থানান্তরের অজুহাত দেখিয়ে মালিকরা গত বছরের চামড়ার টাকা এখনো পরিশোধ করেনি। কোরবানীর ঈদের আগে কিছু বকেয়া পরিশোধ করলেও তা অতিনগন্য। যে ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা পেতেন ট্যানারী মালিকের কাছে তাকে দেয়া হয়ে হয়েছে ১ লাখ টাকা। এ জন্যও চামড়া পাচারের দিকে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা।

 
এদিকে চামড়া পাচাররোধে কঠোর পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির ৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আবুল এহসান সিল্কসিটি নিউজিকে জানান, চামড়ার পাচার ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বিজিবি সদস্যদের। কেউ একটি চামড়া নিয়ে সীমান্তমূখী হলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে কোনো চামড়া পাচার হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। ঈদের পর এক মাস ধরে এই সতর্কাবস্থা থাকবে সীমান্তে। সীমান্ত এলাকায় চামড়া মজুদের ব্যাপারে তিনি বলেন, কেউ যদি চমড়ার ।তিরিক্ত দাম পেতে পরে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করে তবে বিজিবির কিছু করার নেই। তবে অনেক বেশি চামরা সংরক্ষন করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/অ