চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাতে শিক্ষার্থীদের বাইরে না যাওয়ার আহবান পুলিশের

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
রাত ৮টার পর শিক্ষার্থীদের বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান আগেই জানানো হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু এ আহ্বান উপেক্ষা করে রাতে বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তবে তাদের ধরে এনে থানা থেকেই তুলে দেয়া হচ্ছে অভিভাবকদের হাতে।

 
পুলিশ বলছে এতে করে একদিকে শিক্ষার্থীরা রাত ৮টার পরে বাইরে বের হওয়া নিয়ে যেমন ভয়ে থাকবে তেমনি অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের শাসনের মধ্যে রাখবেন। জেলার সূধিজনরা পুলিশের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাগত পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম যোগদানের পরপরই রাত ৮ পর শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক কারণে বাড়ির বাইরে থাকার উপর একরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সামাজিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

 

এ নিয়ে পুলিশ স্থানীয় সংবাদপত্র ও কেবল টিভিতে বিজ্ঞাপ্তি দিয়ে প্রচারণা চালায়। কিন্তু এরপরও বন্ধ হয়নি রাত ৮টার পর শিক্ষার্থীদের বাইরে চলাফেরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার ও রোববার রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

 

সদর থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, রাত ৮টার পর থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। অভিযানে কোর্ট বাগান, নিউমার্কেট এলাকা, নিমতলা, কাঁঠালবাগিচা, বাতেনখাঁর মোড়সহ কয়েকটি স্পট থেকে দুদিনে ৩৫ জনকে ধরে আনা হয়। তারা কোনো প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে ছিলেন। পরে তাদের থানায় এনে অভিভাবকদের খবর দেয়া হয়। একে একে অভিভাবকরা এসে তাদের জিম্মায় নিয়ে যান সন্তানদের।

 
ওসি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অপরাধী বলছিনা। শুধু তাদের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে আনার জন্যই ধরে এনে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। রাত ৮টার পরে যাতে শিক্ষার্থীরা বাইরে না থাকে এ ব্যাপারে খোঁজ রাখার জন্য অভিভাবকদের অনুরোধও জানানো হয়েছে।

 
নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম মঞ্জুর রেজা সিল্কসিটি নিউজকে জানান, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরবে এটা বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ ঐতিহ্য বা শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। আগে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফেরার জন্য শাষন করতেন। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলে মারধর এমনকি বকাবকি করতেন। কিন্তু এখনকার অভিভাবকরা তা আর করেন না। তাই সন্ধ্যাপর পর শিক্ষার্থীদের ঘরমূখী করার দায়িত্ব পুলিশকে নিতে হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে পুলিশের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়। শিক্ষার্থীদের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সময়োপযোগী সিদ্ধান্তা নিয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে আসা শিক্ষার্থীরা যাতে হয়রানি না হয় এ বিষয়ে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের প্রতি।

 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক সেলিনা হোসেন জানান, রাত ৮টার পরে শিক্ষার্থীদের বাইরে থাকার কোনো প্রয়োজনই নেই। ওই সময় শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে থাকবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটা না করে অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে আড্ডা দিচ্ছে এটা কোনোভাবেই কাম্য ছিলনা। রাত ৮টার পরে শিক্ষার্থীদের বাইরে না থাকার ব্যাপারে পুলিশ যে কড়াকড়ি আরোপ করেছে তা প্রশংসার দাবিদার।

 
সচেতন নাগরিক কমিটির সহযোগি ইয়েস গ্রুপ’ এর সদস্যদের পুলিশের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বলা হয়েছে। ইয়েস গ্রুপের সদস্যরা সবাই শিক্ষার্থী।

 
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্ধ্যার পরপরই শিক্ষার্থীদের আড্ডাবাজি বন্ধ করে পড়ার টেবিলমূখী করা। আর এ জন্যই এমন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এটা একটা চলামান প্রক্রিয়া। যতোদিন একজন শিক্ষার্থীকেও রাত ৮ টার পর বাইরে পাওয়া যাবে ততোদিন পুলিশের অভিযান চলবে।

 
তিনি প্রশ্ন তুলেন রাত ৮টার পর শিক্ষার্থীদের বাইরে থাকার আদৌ কি কোনো প্রয়োজন আছে? পুলিশ সুপার আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের ধরে এনে অভিভাবকদের হাতে তুলে দিলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ই সচেতন হবে। এতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
স/শ