চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই বাবা-মায়ের ঠাঁই হলো মেয়ের বাড়িতে!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :

অবশেষে মেয়ের বাড়িতে ঠাঁই মিলেছে বিতাড়িত সেই বৃদ্ধ দম্পতি শেরিনা বেগম (৮৫) ও দাহারুল ইসলামের (৯০)। কয়েক দফা আলাপের পর মেয়ের বাড়িতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হায়াত। সেই সঙ্গে ছেলেদের কাছে যে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দেওয়া হয়েছিল তা ফেরত নিয়ে দাহারুল ইসলামের নামে ব্যাংকে রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাত ১০টায় উপজেলায় কানসাট ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে দাহারুল ইসলামের বন্ধু আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দাহারুল ইসলামের সন্তানদের নিয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, বৃদ্ধ দাহারুলের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসেছিলাম। ছেলেদের কাছে যে অর্থ ছিল তা ফেরত নিয়ে বৃদ্ধ দাহারুলের নামে ব্যাংকে রাখা হবে। এজন্য তার সন্তানদের আমি নির্দিষ্ট সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যেই সব অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধকে ফেরত দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সবার সঙ্গে কথা বলে যা বুঝলাম, অর্থ-সম্পদ নিয়েই দাহারুলের সন্তানদের মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি। এখন সব সন্তানই তার বাবা-মাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। তবে বৃদ্ধ দম্পতি ছেলেদের বাড়িতে যেতে আগ্রহী নয়। তাই মেজ মেয়ের বাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইউএনও বলেন, দাহারুলের মেজ মেয়ে স্কুলশিক্ষিকা। তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি তার বাবা-মাকে সারাজীবন সঙ্গে রাখতে চান। তাই তার বাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে ছেলেরাও আমাকে কথা দিয়েছে সব সময় তার বাবা-মায়ের খোঁজ-খবর রাখবে এবং মাঝেমধ্যে বাবা-মাকে তাদের বাসায় নিয়ে গিয়ে রাখবেন।

দাহারুল ইসলাম বলেন, আমার সাত ছেলে-মেয়ে। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। তবে কিছুদিন আগে থেকেই তাদের সঙ্গে আমার মনোমালিন্য চলছিল। এজন্যই তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কোনোদিন আর ছেলে-মেয়েদের কাছে যাব না। কিন্তু ইউএনওসহ আশপাশের মানুষ সবাই আমাকে ছেলে মেয়েদের কাছেই থাকতে বলছে। তাই রাজি হয়েছি। তবে আমি ছেলেদের কাছে যাব না। তাই মেজ মেয়ের কাছে থাকতে রাজি হয়েছি।

এর আগে বুধবার উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের কামাটোলা বাবুপুর গ্রামে তার নিজ বাড়ি থেকে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে বের করে দেন সন্তানরা। নিরুপায় হয়ে উপজেলার পুকুরিয়া এলাকায় বাল্যকালের বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন তারা। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেন এবং ফলমূল ও খাবার প্রদান করেন ইউএনও আবুল হায়াত। এসময় সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে ঘরে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।