চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে হাতুড়ে চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য: শীঘ্রই মোবাইল কোর্ট

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলাসহ আরও চারটি উপজেলার গ্রামাঞ্চলে হাতুড়ে চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রশাসনিকভাবে কোন তদারকি না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে বিভিন্ন এলাকা সূত্রে জানাগেছে।

 

তারা যেখানে-সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সব ধরণের ব্যবস্থাপত্রসহ ঔষধ বিক্রি করছে। এতে রোগ নিরাময়ের চেয়ে আরও জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা।

 

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সদর উপজেলার আলাতুলি,চর বাগডাঙা, ইসলামপুর, নারায়নপুর শিবগঞ্জ উপজেলার, দুর্লভপুর, মনাকষা, পাঁকা, উজিরপুর ছত্রাজিতপুর, ঘোড়াপাখিয়া এলাকায় গ্রাম্য চিকিৎসকদের দৌরাত্মটা বেশি।

 

এছাড়া শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলায় জনগনের চেয়ে চিকিৎসা কেন্দ্র কম হওয়ায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সেবা দিতে হিমসিম খেতে হয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকার এক শ্রেনীর  সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে ফার্মেসী ও চেম্বার খুলে ঔষুধ বিক্রিসহ চিকিৎসার নামে অপ চিকিৎসা দিয়ে আসছে। এই রকম অসংখ্য চিকিৎসক রয়েছে জেলার আনাচে কানাচে। অনেকের নাম মাত্র প্রশিক্ষণও নেই, অথচ নিজেকে চিকিৎসক দাবি করে জটিল ও কঠিন রোগের ব্যবস্থা পত্রসহ ঔষধ বিক্রি করেন। এই চিকিৎসক নাম ধারীরা জেলার হাট বাজার ও প্রত্যন্ত এলাকায় ফার্মেসী দিয়ে চিকিৎসার পাশাপাশি এলোপ্যাথিক, হোমিও এবং ইউনানি ঔষুধের ব্যবসা করে আসছে। এমনকি প্রত্যন্ত চরাঞ্চলসহ গ্রামাঞ্চলে পান সিগারেটের দোকোনেও ঔষধ রেখে ব্যবসা করে আসছেন। পাঁকা, উজিরপুর, মনাকষা, চরবাগডাঙা, ইসলামপুরসহ জেলার অধিকাংশ এলাকায় ডিএমএফ চিকিৎকরা মানুষের ভুল চিকিৎসা করে আসছেন। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সরকারি হাসপাতালে ও চিকিৎসা কেন্দ্রে না পাঠিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে পাঠিয়ে কমিশন বাবদ বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

 

কয়েকটি ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানাগেছে,নতুন একটি ক্লিনিক চালুর সময় প্রধান ভরসা হয় গ্রামাঞ্চলের পল্লী চিকিৎসকরা। তাদের খুশি রাখতে পারলেই ব্যবসা চলে জমজমাট। তারা বছর জুড়ে রোগী পাঠান চুক্তিভিত্তিক ক্লিনিকগুলোতে। আর এসব ভুয়া নামধারী চিকিৎসকের খপ্পড়ে পড়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের সহজ সরল অনেক সাধারন মানুষ।

 

এলাবাসীর অভিযোগ, এসব ভুয়া চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় অনেকেরই অঙ্গহানিসহ মৃত্যু হচ্ছে। তাদের খপ্পড়ে পড়ে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে শিশু ও প্রসূতিদের।

 

সূত্রমতে, নব্বই দশকে সরকারি এক আদেশে পল্লী চিকিৎসকদের প্রাথমিক সেবা প্রদানের অনুমতি দেয়া হয়। ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, ছয় মাসের প্রশিক্ষন নিয়ে যে কোন ব্যক্তি প্রাথমিকভাবে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা দিতে পারবে। ব্যবস্থাপত্রে সাধারণ ঔষুধ লিখবেন। রোগীদের কোন প্রকার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও ইনজেকশন দিতে পারবেনা।

 
সদর আধুনিক হাসপাতালের কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক নাম না প্রকাশ করা শর্তে জানান, হাতুড়ে ও ভুয়া চিকিৎসকরা এলাকায় নিজেদের নাম প্রচারের জন্য সর্বরোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছে। রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় না করেই রোগীদের একাধীক ঔষধ দিচ্ছে। ফলে কোন ওষুধেই কাজ হয় না। কিন্তু রোগীদের ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। তারা একটি রোগীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের এই অপচিকিৎসার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি বড় বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কর্তব্যরত মূলধারার চিকিৎসকদের উপর।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাক্তার কাজী শামিম হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে জানান, গ্রাম্য চিকিৎসকের নামে যারা বড় বড় ডাক্তার সেজে চিকিৎসা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শ্রীঘ্রয় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/অ