চলতি বছরের প্রাথমিক সমাপনী বাতিলের প্রস্তাব

চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেনের স্বাক্ষর শেষে এসংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে এবার পিইসি ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিল হবে কি না।

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন গতকাল  বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ না করা সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

সারসংক্ষেপে বলা হয়, গত ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে পিইসি পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়টি সার্বিক পর্যালোচনা করে ২০২০ সালের পিইসি পরীক্ষা না নিয়ে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উন্নীতকরণের কার্যকম করা যেতে পারে। এমন সিদ্ধান্ত হলে ২০২০ সালে পিইসি অনুষ্ঠিত না হলে সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতে দেওয়া মেধাভিত্তিক বৃত্তি প্রদান সম্ভব হবে না। তবে উপবৃত্তি কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০২০ সালের পিইসি ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা গ্রহণ না করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, একই বৈঠকে চলতি বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা না নেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন গত সোমবার বলেন, ‘জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অ্যাপ্রোপ্রিয়েট অথরিটির অ্যাপ্রুভাল এবং অ্যাপ্রোপ্রিয়েট অথরিটির মাধ্যমেই এ ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে আরো বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু দেশ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় খুলেছে। জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া বিদ্যালয় খুললেও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাত্ক্ষণিকভাবে আবার বন্ধ করেছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে এখনো বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলেও অভিভাবকরা তাঁদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে না-ও পাঠাতে পারেন। এতে যারা বিদ্যালয়ে যাবে এবং যারা যাবে না, তাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। সংশোধিত পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নিতে হলে আরো প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান প্রয়োজন। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয় খোলা না গেলে যে কার্যদিবস পাওয়া যাবে, তাতে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির অবশিষ্ট পাঠদান সম্ভব হবে না।

পঞ্চম শ্রেণির পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩১ কর্মদিবস নির্ধারণ করা ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার আগে পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পাঠদান সম্ভব হয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে মোট ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে বিধায় পঞ্চম শ্রেণির ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ