‘চট্টগ্রাম কখনো মাথা নত করেনি’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম কখনো মাথা নত করেনি। ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও চট্টগ্রাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চট্টগ্রাম’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর তিনি এসব কথা বলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আগামী ২৮ মার্চ গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতালে ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ড হলে নিরাপত্তা বাহিনী ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, ‘হরতাল, ধর্মঘট রাজনৈতিক চর্চা। কিন্তু এসব করতে গিয়ে কেউ যদি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করে, ভাঙচুর করে, তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী ভূমিকা রাখবে। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো সহনশীলতার পরিচয় দেবে। তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে না। ’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য শুধু বাংলাদেশে বাড়েনি। সারাবিশ্বে বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে গেছে, পণ্যবাহী পরিবহনের ভাড়া অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আমাদের দেশ তেল আমদানি করে, আমাদের দেশে অনেককিছুই আমদানি নির্ভর। আমদানি ক্ষেত্রে দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে, তার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়েছে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ’ এর বিপরীতে সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাজার সহনশীল রাখতে উদ্যোগ নিয়েছেন। ভ্যাট এবং ট্যাক্স কমিয়ে দিচ্ছেন। পণ্যটা যাতে সহজলভ্য হয়, টিসিবির মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন। আমাদের কিন্তু তেলের দাম, পিঁয়াজের দাম সবকিছুই এখন নিম্নমুখী। সরকারের প্রচেষ্টার অভাব নেই। তারপরও যদি কেউ হরতাল ডাকে, আমাদের কিছু বলার নেই। ’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা করলে তাঁরা জনগণ দ্বারা ধিকৃত হবে এবং জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। ’

পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানিয়েছেন, প্রায় ছয় হাজার বর্গফুট আয়তনের এলাকায় জাদুঘরটি তৈরি করা হয়েছে। এখনে ১৩৯০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে গঠিত ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র সদস্যদের ছবিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হকসহ অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্মারক সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো স্মৃতিস্মারক সংগ্রহ করে জাদুরটি সমৃদ্ধ করা হবে।

তিনি বলেন, ১৯৩০ সালে সূর্য সেনের নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের ব্রিটিশ পুলশের চট্টগ্রামে অবস্থিত অস্ত্রগার লুণ্ঠন, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস ও ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলা চালানোর মাধ্যসে স্বাধীনতা লাভের প্রয়াস চলে। সেই সময়ের সেই অস্ত্রগার তথা লাল দালানটি অক্ষত রেখেই জাদুঘর তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের ৮১ জন বীর শহীদের স্মৃতি স্মারক সংরক্ষণ করা হয়েছে। এতে ভবিষ্যত প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন হবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। ’

জাদুঘর ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বিভিন্ন সময়ের পুলিশের পোশাক, তৎকালীন সময়ের সরকারি দপ্তরের চিঠি, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, বীর শ্রেষ্ঠদের বৃত্তান্ত, পুলিশ সদস্যদর বর্তমান পোশাক, দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের ম্যাপ, সূর্য সেনের ফাঁসির মঞ্চের রেপ্লিকা, ভিজুয়াল ডিসপ্লে সংবলিত হল রুম, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের ছবি, তথ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক কেন্দ্রিক দেশি বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকার নিউজ, বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন বই, বঙ্গবন্ধুর ছবি ও তাঁর লেখা বই, মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দিন, সংসদ সদস্য যথাক্রমে নজরুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল লতিফ, মোস্তাফিজুর রহমান, আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী, একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ