ঘুরে-ফিরে তাঁরা আরএমপিতেই: জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপকর্মে, রয়েছে সুনামও

নিজস্ব প্রতিবেদক:


কেউ আছেন ১৭ বছর ধরে ধরে। কেউ ১৫ বছর ধরে। আবার রয়েছেন দুই যুগ ধরে। ঘুরে-ফিরে রাজশাহী মহানগর পুলিশেই থেকে গেছেন তাঁরা। আর সেই সুযোগে অপরাধ জগতের হোতাদের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন সখ্যতা। নিজেরাও কখনো কখনো জড়িয়ে পড়েছেন নানা অপরাধে। কনস্টেবল পদে পুলিশের চাকরিতে যোগদান করে কেউ কেউ এএসআই থেকে এসআই হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন এখানেই। কিন্তু থেমে থাকেনি তাদের বিভিন্ন অপরাধমূক কর্মকাণ্ড। এমন অন্তত ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন আরএমপিতে। এসব পুলিশ সদস্যদের নানা অপরাধের বিষয়গুলো তুলে ধরে পুলিশ সদর দপ্তরেও প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু টলেনি তাদের অবস্থান। শক্ত খুঁটি গেড়ে বসে আছেন এই আরএমপিতেই। তবে কেউ কেউ বছরের পর বছর আরএমপিতে থাকলেও এখনো সুনামের সঙ্গেই চাকরি করে যাচ্ছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাবারক হোসেন পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন ১৯৯২ সালের ৫ নভেম্বর। পরের দিন ৬ নভেম্বর তিনি আরএমপিতে যোগ দেন। সেই থেকে এখানেই রয়ে গেছেন তিনি। কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং ২০০১১ সালে এসআই পদে পদোন্নতি পেয়েও আরএমপিতেই তিনি অবস্থান করছেন। বর্তমানে নগরীর বিমানবন্দর থানায় কর্মরত রয়েছেন। আরএমপির কেন্দ্রীয় রিজার্ভ অফিসে এসআই আব্দুর রশিদ ১৯৯৮ সালের ২৬ মে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি ২০০৩ সালের ১৬ মে আরএমপিতে যোগদান করেন। তিনিও কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং গত ২০০৯ সালের ৩ নভেম্বর এসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে এখনো আরএমপিতেই থেকে গেছেন।

নগরীর রাজপাড়া থানা এসআই শরিফুল ইসলাম ১৯৯৮ সালের ৬ জুন পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি আরএমপিতে যোগদান করেন ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ। তিনিও কনেস্টবল থেকে এএসআই এবং ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর এসআই পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তবে এখনো রয়েছেন এখানেই। এসআই উত্তম কুমার বর্তমানে কর্মরত বোয়ালিয়া মডেল থানায়। এখানেই কর্মরত রয়েছেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তিনি ২০০৫ সালের ৭ আগস্ট কনেস্টবল হিসেবে যোগ দেন। ওইদিনই তিনি প্রথম কর্মস্থল হিসেবে আরএমপিতে যোগ দেন। তিনিও এএসআই থেকে এসআই পদে পদোন্নতি পেয়েছেন এখানেই।

নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই গোলাম মোস্তফা রয়েছেন ১৩ বছর ধরে। তিনি ২০০৪ সালে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দিয়ে ২০০৭ সালের ২৪ মে আরএমপিতে যোগদান করেন। এরপর দুই দফা পদোন্নতিতে তিনি এখন এসআই।

নগগীর মতিহার থানার এসআই সেলিম রেজা ১৯৯৫ সালে কনস্টেবল হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করেন। তার পর ২০০৯ সালের ১৭ জুন তিনি আরএমপিতে যোগদান করেন। দুই দফা পদোন্নতিতে তিনিও এখন এসআই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মতিহার থানায়। কিন্তু ১১ বছর ধরে ঘুরে ফিরে এ থানা ও থানা করে আরএমপিতেই রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো একটি প্রতিবেদন সূত্র মতে, এর বাইরেই রাজশাহী মহানগর পুলিশের আরও ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন এখানেই। এসব পুলিশ সদস্যের কেউ কেউ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার পাশাপাশি মাদক কেনাবেচায় জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করে উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়াও অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ দীঘর্ঘদিন চাকরি করলেও এখনো বড় ধরনের কোনো অভিযোগ ছাড়ায় সুনামের সঙ্গেই চাকরি করে যাচ্ছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগ পুলিশের মূখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘দীর্ঘদিন একই ইউনিটে চাকরি করাটা অপরাধ নয়। তবে দেখতে হবে তিনি কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন কিনা। কেউ যদি কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন চাকরি করলেও অনেকেই সুনামের সঙ্গে এখানেই আছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে নাই। এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

স/আ