গোল্লা নিয়ে গণ্ডগোল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কয়েক বছর আগেও যদি এমন বলা হতো যে, ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে সুস্বাদু মিষ্টান্ন ‘রসগোল্লা’ বাঙালিদের-ই অবদান, তাহলে কেউ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছে এমনটি হয়নি কখনো।

 

কিন্তু সম্প্রতি উড়িষ্যাবাসী দাবী করছেন রসগোল্লার উৎপত্তি নাকি সেখানে। যদিও এখনো পর্যন্ত রাজ্যের অধিকাংশই মনে করেন রসগোল্লা পশ্চিমবঙ্গের অবদান।

 

সম্প্রতি উড়িষ্যার একটি গ্রুপ দাবী করেছেন রসগোল্লা মূলত উড়িষ্যাদেরই অবদান। এটা উড়িষ্যার জগন্নাথ সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবেই সর্বপ্রথম যাত্রা শুরু করে। তাই বাঙালিরা নয়, উড়িষ্যারাই এই ঐতিহ্যের একক দাবীদার।

 

এই ঘোষণার পরপরই উড়িষ্যার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি আলাদা সাড়া পড়েছিল। ৩০ জুলাইকে ‘রসগোল্লা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে এই দাবীটি আরো বেশি জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। গেল বছর থেকে এই উৎসব পালন করেছে বেশ কিছু সংগঠন।

 

মূলত এই দিবসের পর থেকেই উড়িষ্যাদের মনে মধ্যে রসগোল্লা নিয়ে নতুন আগ্রহ তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে। নতুনদের এই আলোড়নে আলাদা হাওয়া লেগেছে উড়িষ্যা সংবাদ মাধ্যমে। তাই আসছে ৩০ জুলাইকে কেন্দ্র করে রসগোল্লা দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে উড়িষ্যার বড় বড় সাংস্কৃতিক সংগঠন।

 

স্থানীয় সরকার থেকেও নতুন সুর শোনা যাচ্ছে রসগোল্লা দিবস নিয়ে। কেননা গত বছরের রসগোল্লা দিবস প্রচুর জনপ্রিয় হওয়ায় প্রচুর মানুষ মুখিয়ে রয়েছেন। বেশ কিছু উড়িষ্যাবাসীকে টুইটার ফেসবুকে গত বছরের রসগোল্লা দিবসের ছবি শেয়ার করে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।

 

তবে রসগোল্লা নিয়ে উড়িষ্যাদের এতো মাতামাতি ভালো চোখে দেখছে না পশ্চিমবঙ্গ। ‘রসগোল্লা আসলে কোন গোষ্ঠীর ঐতিহ্য’ এই নিয়ে বর্তমানে কলকাতার তরুণ বাঙালিদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। কেউ কেউ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। টুইটার সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাঙালি ও উড়িষ্যাদের রসগোল্লা বিতর্ক চোখে পড়ার মতো।

 

রসগোল্লার ঐতিহ্যের দাবীতে উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারের মধ্যেও আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার ময়রা নবীনচন্দ্র দাশ ১৮৬৮ সালে প্রথম রসগোল্লা উদ্ভাবন করেন বলে অনেকেই একমত। রসগোল্লার ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায়, কলকাতা থেকে প্রকাশিত এক নথিতে লেখা রয়েছে ১৮৬৮ সালে পৃথিবীকে সর্বপ্রথম রসগোল্লার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন নবীন চন্দ্র দাস নামের লোক যিনি বাঙালিই ছিলেন।

 

অন্যদিকে উড়িষ্যার পুরি শহরের ইতিহাস থেকে জানা যায় পুরির বিখ্যাত জগন্নাথদেবের মন্দিরে পনের শতকের দিকে প্রসাদ হিসেবে রসগোল্লা বিতরণ করা হতো। উড়িষ্যা সরকার রসগোল্লার জন্য জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা ‘জিআই ট্যাগ’ দাবি করতে চলেছে-যা পেটেন্টের সমতুল্য।

 

পুরিতে জগন্নাথদেবের মন্দিরে শত শত বছর ধরে রসগোল্লা ভোগের রীতি প্রচলিত- এই যুক্তিতেই তারা রসগোল্লার ওপর দাবি পেশ করতে যাচ্ছেন। এ খবর পেয়ে পশ্চিমবঙ্গও এখন পাল্টা আপিল ঠোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জিআই ট্যাগ মঞ্জুর হলে কার্যত রসগোল্লার ওপর পেটেন্ট পেয়ে যাবে উড়িষ্যা।

 

সূত্র: রাইজিংবিডি