গোমস্তাপুরে বিদ্যুৎ না থাকায় চাষাবাদ বন্ধ, মিলছে না কর্তৃপক্ষের সাড়া

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি :
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিবিষণ গ্রামে। যেখানে রয়েছে কৃষকদের ফসল ফলাবার স্বপ্ন। স্বপ্নের জমিতে যদি ধান চাষ না হয় তাহলে পরিবারের মুখে আহার জুটবে কি করে। সারাবছর সংসার চালাবেনই বা কি করে। বছরে একটি মাত্র ফসল উৎপাদন করে ঘরে যখন ফসল তোলে তখন কৃষকদের মুখে ফুটে উঠে আনন্দ। কিন্তু ধান উৎপাদন করতে গিয়ে যদি সমস্যায় পড়তে হয়।
তাহলে গরীব কৃষকদের কি হবে। এমনি শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে শত বিঘার উপরে অনাবাদী থাকা জমির কৃষকদের। সারাদেশে এখন বোরো ধান রোপনের মৌসুম চলছে। অথচ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলার কারণে এখন পর্যন্ত বিবিষণ গ্রামের বেশ কিছু কৃষকের জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। তাদের দ্ঃুখ দুর্দশার কথা জানাতে সেই কৃষকগণ জড়ো হয়েছিল উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে রোববার ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে। এখনে প্রথমেই এসে তারা মানবন্ধন করে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিকদের নজরে আশার চেষ্টা করছিলো।
কিন্তু প্রথমেই তারা বাধার সম্মুখীন হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার ও রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ নাজমুল হক তাদের বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কৃষকগণ মানববন্ধন করতে সক্ষম হন।
সেখানে কৃষকগণ বক্তব্য রাখার সময় অভিযোগ করে বলেন, তাদের কারো ৩২ বিঘা,কারো ১০ বিঘা,কারো ৫ বিঘা করে অনেকের জমি অনাবাদি রয়েছে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আসমা খাতুন জমি চাষাবাদ করার জন্য বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সেজন্য কৃষকগণ বাধ্য হয়েই রহনপুরে এসে তাদের দ্ঃুখ দুর্দশার কথা জানাতে চেয়েছে।
এসময় কৃষকদের মধ্যে তসিবুর রহমান, সামিউল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন , আব্দুল আওয়াল সহ প্রায় ২৫-৩০ জন কৃষক উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, বেশীরভাগ কৃষক টাকা দিয়ে জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও পানির অপেক্ষায় রয়েছেন। এজন্য অনেকেই গরু,ছাগল বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করতে হয়েছে। তাদের অভিযোগ আশপাশে যেসকল গভীর নলকূপে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। সেগুলো থেকেয় পানি সরবরাহ করলেই তাদের চাষাবাদ সম্ভব। আর তাদের দাবি জমি চাষাবাদের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন গভীর নলকূপে অবলম্বে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হোক।অথবা নতুন করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হোক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভির আহমেদ সরকার জানান, মানববন্ধন করতে তাদের বাধা দেওয়া হয়নি। কৃষকগণ মানববন্ধন করার কথা পূর্ব থেকেই উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেনি। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলেছি এবং তাদের জমি চাষাবাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। কৃষকগণ আপাতত পাশ্ববর্তী গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে তাদের জমি চাষাবাদ করবেন।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (চঃদাঃ) মোঃ ছানোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, গভীর নলকূপটি একসময় সাদরুল আমিনের দায়িত্বে ছিলো। তিনি তাঁর জমি অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়ায় সাদরুল আমিন ও বিক্রেতা মিলে গভীর নলকূপটি অন্যত্র স্থানান্তর করেন। ফলে স্বাভাবিক কারণেই বিদ্যুৎ সংযোগটি বিছিন্ন হয়ে যায়। কৃষকগণ তাদের জমি যাতে চাষাবাদ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি প্রস্তুত। তবে উপজেলা সেচ কমিটি যদি ছাড়পত্র দেয় তবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আমাদের আর সময় লাগবে না। তাছাড়া বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার আসমা খাতুন বলেন, ইতিমধ্যে আমি অনাবাদি জমিগুলো পরিদর্শন করেছি। খুব দ্রুতই উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেই সমাধান করা হবে। কৃষকদের মানববন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন,তারা মানবন্ধন করতে আসেনি,আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। আমি জেলাতে থাকায় তারা আমার সাক্ষাৎ পায়নি।