গোদাগাড়ীতে ইয়াবার টাকা আদায়ে থানায় সালিস!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে ইয়াবার টাকা আদায়ে থানায় বসে সালিস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় ওই সালিস বৈঠক করে মাদক ব্যবসায়ী উপজেলার সারাংপুর এলাকার কাজল হোসেনকে ৩০ হাজার টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

 

তিনি আরেক মাদক ব্যবসায়ী রেলবাজার এলাকার আব্দুল মতিন ওরফে মতির স্ত্রী ময়না বেগমের কাছ থেকে দুই হাজার পিস ইয়াবা বিক্রির টাকা পেতেন। এসআই শাহীন আলমের নেতৃত্বে সালিস বৈঠক শেষে ৩০ হাজার টাকায় বিষয়টি রফা করে দেওয়া হয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

 

গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুল আলম মুন্সী বলেন, ‘পাওনাদার টাকা পেত। এ নিয়ে সে একটি মোটরসাইকেলও আটক করে রেখেছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর ওই মোটরসাইকেল পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে। পরে থানায় বসে উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া হয়। তবে মাদকের টাকা কি না তা বলতে পারব না। ’

 

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘গোদাগাড়ীর বেশির ভাগ লোকই মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কাজেই কে কার কাছ থেকে কিসের টাকা পায়, তা বলা মুশকিল। ওই টাকাও মাদক ব্যবসার কি না সেটি অবশ্য বলতে পারব না। ’

 

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, কিছুদিন আগে গোদাগাড়ী পৌর এলাকার সারাংপুরের মাদক ব্যবসায়ী কাজল হোসেন রেলবাজার এলাকার আরেক খুচরা মাদক ব্যবসায়ী মতির স্ত্রী ময়নার কাছে দুই হাজার ইয়াবা বিক্রি করেন বাকিতে। তবে ময়না ইয়াবার প্রায় ৮০ হাজার টাকা পরে আর পরিশোধ করেননি। এ নিয়ে কাজল কিছুদিন নিজেই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে আসছিলেন। পরে ব্যর্থ হয়ে গোদাগাড়ী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন এবং সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা রহিমের শরণাপন্ন হন। অভিযোগ পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতা এক দফা সালিস করে ৫৬ হাজার টাকায় মীমাংসা করে দেন। কিন্তু ময়না সময় নিয়েও পরে আবারও টাকা পরিশোধে কালক্ষেপণ শুরু করেন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,  এরই মধ্যে কাজল টাকা আদায়ের জন্য ময়নার স্বামীর ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল আটক করে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে ময়না সেটি উদ্ধারের জন্য থানার ওসি হিফজুল আলম মুন্সীর কাছে যান। ওসি বিষয়টি দেখার জন্য এসআই শাহিন আলমকে নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ গিয়ে কাজলের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তবে কাজল জানান, ময়নার কাছে তিনি প্রায় ৮০ হাজার টাকা পাবেন।

 

শেষে গত শনিবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের মধ্যে সালিস বৈঠক করে ৩০ হাজার টাকায় বিষয়টি রফা করে দেন এসআই শাহিন আলম। ময়না ওই টাকা পরিশোধ করতে আপত্তি জানিয়ে ওসি হিফজুল আলম মুন্সীর কাছে যান। পরে ওসি আরো দুই হাজার টাকা কমিয়ে ময়নাকে ২৮ হাজার টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দেন। পরে টাকা পরিশোধ করে স্বামীর গাড়িটি শেষ পর্যন্ত থানা থেকে নিয়ে যান ময়না।

 

যোগাযোগ করা হলে ময়না স্বীকার করেন থানায় বসে মীমাংসার মাধ্যমে তাঁর স্বামীর গাড়িটি উদ্ধারের কথা। তবে কিসের টাকা কাজল পেতেন, সে বিষয়ে তিনি কথা বলতে চাননি। কাজলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

 

এসআই শাহিন আলম বলেন, ‘আইনগত সহায়তা চাওয়ায় তাদের উভয় পক্ষের মধ্যে টাকা পাওনার বিষয়টি সমাধা করে দেওয়া হয়েছে। তবে কিসের টাকা দেনা-পাওনা ছিল জানি না। ’