গোদাগাড়ীতে শীতার্তের মাঝে কম্বল বিতরণ ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ‘পিপল’স রোকেয়া ফাউন্ডেশন’ ও ‘আরশাদ আলী মেমোরিয়াল কলেজ’ এর সহযোগিতায় অসহায় শীতার্তদের মাঝে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ করেছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী আয়েশা আখতার ডালিয়া। এছাড়া এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৮০ জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনাও দিয়েছেন তিনি। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে তিনি উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের দিগ্রামে ও ঘনশ্যামপুর এলাকায় সামাজিক এসব কর্মকাণ্ড করেন ডালিয়া।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশিষ্ট সমাজসেবী আয়েশা আখতার ডালিয়া অসহায়, গরীব-দুঃখী মানুষের খোঁজ-খবর নিতে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন গোদাগাড়ীতে। সকালে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দিগ্রামের তিন শতাধিক শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।

জুম্মার নামাজের পর ঘনশ্যামপুর এলাকার মসজিদের মুসল্লিসহ ওই এলাকার সর্বস্তরের জনগণের মাঝে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ৫ মণ মিষ্টি বিতরণ করেন। এছাড়া শুক্রবার বিকাল ৩টায় উপজেলার ঘনশ্যামপুর এলাকায় অবস্থিত ‘আরশাদ আলী মেমোরিয়াল কলেজ’ এর উদ্যোগে কলেজ মিলনায়তনে ‘পিপল’স রোকেয়া ফাউন্ডেশন’ ও ‘আরশাদ আলী মেমোরিয়াল কলেজ’ এর প্রতিষ্ঠাতা আয়েশা আখতার ডালিয়া প্রধান অতিথি থেকে উপজেলায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় (২০২২) জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে সংবর্ধনা প্রদান করেন তিনি।

জানতে চাইলে সমাজসেবী আয়েশা আখতার ডালিয়া বলেন, ‘আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় জনগণকে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে তিন শতাধিক শীতার্তের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছি। উপজেলার ৮০ জন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা প্রদান করেছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-০১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে সামাজিক এমন নানা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মীনি আয়েশা আখতার ডালিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তানোর-গোদাগাড়ী আসনটিতে তাঁর বাবা ও দাদার বাড়ি। কিন্তু তাঁর স্বামী শাহরিয়ার আলমের নির্বাচনী এলাকা বাঘা-চারঘাটের তুলনায় তানোর-গোদাগাড়ী আসনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এখানকার জনগণও অনেকটা পিছিয়ে। এ কারণে প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানকার জনকল্যাণে কাজ করছেন। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান, আদিবাসী নারী-পুরুষদের শিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিশু ও নারীদের সুস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি এছাড়া পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণসহ নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীদের আত্মনির্ভরশীল হতে সহযোগিতা করছেন । আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রস্তুত এবং জয়ী হওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী।

আয়েশা আখতার ডালিয়া বলেন, ‘আমি সামাজিক কাজ করতে পছন্দ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার আইডল। গত ১০ বছর ধরে একটি ফাউন্ডেশন চালাই। এখানে ২০০ জন নারী আছেন। এর মধ্যে ১৫০ জন বিভিন্ন কর্মে প্রবেশ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘গোদাগাড়ীতে অবহেলিত দুস্থ মানুষের সেবায় সাত বছর ধরে ফ্রি ক্লিনিক চালাই। এখানকার অবহেলিত মানুষ এখানে চিকিৎসা নেন। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ চিকিৎসা পেয়েছেন। আমার ইচ্ছা আছে, এই এলাকায় ১৫-২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল করার। যেখানে জটিল অপারেশনসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হবে এবং আমি অবশ্যই সেখানে বিনামূল্যে এসব চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। কারণ, এই অঞ্চলের অসহায় জনগণের যাতে কষ্ট করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা না নিতে হয়। এমনও হয় যে, মারাত্মক কোনো রোগে আক্রান্ত হলে গোড়াগাড়ী-তানোরের কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে, সেখান থেকে এসব রোগী রাজশাহী মেডিকেল কজেল হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই মূল্যবান জীবনটি হারিয়ে ফেলে। এজন্য আমি এই চিন্তা-ভাবনা থেকেই অসহায়-গরীব মানুষের সব ধরনের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এই হাসপাতালটি আমি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোদাগাড়ীর ঘনশ্যামপুর এলাকায় আমার বা্বার নামে ‘আরশাদ আলী মেমোরিয়াল কলেজ’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি। কারণ এখানকার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় পিছিয়ে। অনেক দূরের কলেজে তারা যেতে চায় না। আমার কাজের এরিয়া নারী ও শিশু। আমার নিজের আয় থেকেই খরচ করি। আমি প্রতি সপ্তাহে নিজে রান্না করে রিকশাচালকদের মাঝে খাবার দিই।’

তানোর-গোদাগাড়ী পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে ডালিয়া বলেন, ‘তিনটি নির্বাচনে আমার স্বামীর পক্ষে কাজ করেছি। বাঘা-চারঘাট আসনের এলাকা বেশ উন্নত হয়েছে। কিন্তু তানোর-গোদাগাড়ী বেশ পিছিয়ে আছে। এখানে প্রায় ৩০ হাজার আদিবাসী আছেন। তাঁদের নিয়ে কাজ করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নৌকার লোক। প্রধানমন্ত্রী আমাকে যোগ্য মনে করলে কাজ করব। নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চাইব। ডালিয়া বলেন, ‘সুযোগ পেলে আমার পুরো নির্বাচনী এলাকাকে আমার বাড়ি ভাবব। সবাইকে পরিবারের সদস্য মা, বাবা, ভাই, বোন ভাবব। নারীদের জন্য অনেক কিছু বাধা থাকে। এখানে আমি বাধার কিছু দেখছি না। আদিবাসীদের জন্য কাজ করব। স্কুল-মাদ্রাসার জন্য কাজ করব। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করব।’

এএইচ/এস