গরু বিক্রেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ!

রাজধানীর কমলাপুর গরুর হাট। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে জমজমাট হয়ে ওঠে এই হাট। কিন্তু এ বছরের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। অন্যবার কমলাপুর সংলগ্ন সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে আশপাশের ফাঁকা জায়গায় কোরবানির পশু ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় মুখরিত থাকত। কিন্তু এবার ততটা নয়। করোনা পরিস্থিতি রাজধানীর গরুর হাটের দৃশ্য বদলে দিয়েছে। আর এমন পরিস্থিতিতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কমলাপুর হাটে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারী-বিক্রেতারা ট্রাক ও নৌকায় পশু এনে এ হাটে অবস্থান নিয়েছেন। ব্যাপারীরা হাট কর্তৃপক্ষের আদেশ-নিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে অবস্থান করছেন। বারবার ইজারাদার কর্তৃপক্ষ মাইকে ঘোষণা দিচ্ছে, ‘মাস্ক ছাড়া কেউ হাটে প্রবেশ করবেন না।’ গরু বিক্রেতাদের উদ্দেশে বলা হচ্ছে, ‘হাটে পশুচিকিৎসক অবস্থান করছেন, গরুর কোনো সমস্যা থাকলে দেখাতে পারেন।’

এই হাট প্রতি বছর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার সামনে থেকে আশপাশের ফাঁকা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতি ও চাহিদার কারণে হাটে গরুও আসে প্রচুর। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ গরু এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও হাট শুরু না হওয়ায় সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে ঘেরা জায়গায় গরুসহ বিক্রেতারা অবস্থান করছেন। বেচাকেনা সেভাবে জমে ওঠেনি। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, আগামী মঙ্গলবার থেকে হয়তো বা ক্রেতা সমাগম ঘটতে পারে।

কুষ্টিয়া থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে কমলাপুর হাটে এসেছেন আব্দুস সোবহান নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা দুইজন মিলে পাঁচটি গরু নিয়ে এই হাটে এসেছি। প্রতিটি গরুর পেছনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা প্রতিদিন খরচ হচ্ছে। তবুও বিক্রির আশায় আমরা এখানেই থাকছি, রান্না করে খাচ্ছি।’

তিনি বলেন, প্রতিবার এই সময় যেমন ক্রেতা আসে এবার তেমন ক্রেতাই আসতে শুরু করেনি। দুই-একজন আসে গরু দেখে, দাম শুনে সরে যায়। গতবার যে মাপের গরু দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছি এবার সেই গরু এক লাখ টাকাও দাম বলছে না ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু এনেছি তাদের কপালে এবার চিন্তার ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরু এনেছেন সাজ্জাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এবার এখনও ক্রেতারা হাটে আসেনি। যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগই ছোট গরু খুঁজছেন। তুলনামূলক বড় গরুর দাম কেউ বলছেই না। ক্রেতাদের চাহিদা এবার ছোট গরু। আমরা আটটি গরু এনেছি মাঝারি সাইজের। কিন্তু খুবই চিন্তায় আছি এবার আদৌ কি আমাদের সব গরু বিক্রি হবে? আমরা চারজন মানুষ, সবার প্রতিদিনের খরচ। আবার প্রতি গরুর পেছনে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ আছে। সব মিলিয়ে এবার ভয় পাচ্ছি।’

কোরবানির গরু কেনার উদ্দেশে রাজধানীর বাসাবো থেকে এসেছেন মকিদুর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেড় লাখ টাকার মধ্যে গরু কিনি। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে ব্যবসায়িক অবস্থা খারাপ। যেহেতু কোরবানি দিতেই হবে, তাই তুলনামূলক কম দামের গরু কিনতে চাই। এ বছর বাজেট ৬০ থেকে ৮০ হাজার। আমার মতো অধিকাংশ মানুষই এবার ছোট গরু কিনবে।’

ক্রেতা কম হওয়ায় বিক্রেতারা একজন ক্রেতা পেলেই তাকে ঘিরে ধরছেন। বলছেন ‘স্যার, আমার গরু দেখেন। ভালো গরু, কম দামেই ছেড়ে দেব।’

হাটের ইজারাদারের পক্ষে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নাহীদ হাসান বলেন, ‘আমরা হাটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গলবার থেকে হাট শুরু হবে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরুর ব্যাপারী, বিক্রেতারা গরু নিয়ে চলে এসেছেন, আরও আসবে। তবে গতবার এই সময় থেকেই যেমন গরুর চাহিদা ছিল, সেই তুলনায় এবার ক্রেতা উপস্থিত কম। আশা করছি দুই-তিন দিনের মধ্যেই ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি, বিভিন্ন আকৃতির গরুর আমদানির মধ্যে দিয়ে হাট জমজমাট হয়ে উঠবে।

জানা গেছে, এবার ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) এলাকার ১৭টি স্থানে বসবে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় ছয়টি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে একটি স্থায়ী হাট এবং পাঁচটি অস্থায়ী। স্থায়ী হাটটি বসবে গাবতলীতে। অস্থায়ী হাটগুলো হলো- উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গায়, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গায়, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ-সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গায়, ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাট এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গায়।

অন্যদিকে ডিএসসিসি এলাকায় বসবে ১১টি হাট। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক- ই এফ জি এইচ ও সেকশন-১ ও ২- এর খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা এবং ধুপখোলা মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা।