খেলার মাঠে ভাষা সৈনিকের প্লট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে একটি খেলার মাঠে বাড়ি করার জন্য এক ভাষা সৈনিককে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে  হাউজিং এস্টেট। বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পর মাঠটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে এলাকাবাসী। বুধবার সকালে মাঠ রক্ষায় বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়ায় তারা।  এলাকাবাসির অভিযোগ, এই মাঠেই রাাজশাহী শহরের বড় বড় খেলোয়াড় ও  জনপ্রতিনিধিরা তাদের শৈশব পার করেছেন। মাঠটিকে বাঁচানো না হলে সেখানকার শত শত তরুন খেলোয়াড় তাদের বিনোদনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। বিষয়টি জানতে পেরে সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এবং নগর আওয়ামীলগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান সেখানে পৌছে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করলে ফিরে যান তারা।

জানা যায়, নতুন বাড়ি করার প্লট বরাদ্দের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই হাউজিং এস্টেটকে জানিয়েছিলেন ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখু্ঞ্জি। হাউজিং এস্টেটের পক্ষ থেকে নগরীর উপশহর এলাকায় প্লট খোজা শুরু করা হয়। এরপর নগরীর উপশহর এলাকার মহিলা ঈদগাহটিতে প্লট বরাদ্দের কথা বলা হয়। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী তাতে বাধা দেয়। গত কয়েক দিন  আগে উপশহরের টাঙ্কির মাঠের পূর্ব পার্শ্বের জমিটিতে প্লট আকারে বরাদ্দ দেয়া হয় ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জির নামে। প্লটের টাকা পরিশোধ করা হয়ে যাওয়ায় কাজও শুরু হবে খুব দ্রুতই। আর এতে করে টাঙ্কির মাঠের বেশ কিছু জায়গা চলে যাবে প্লটের ভেতরে। এমন খবর এলাাকাবাসীর কাছে গেলে ক্ষোভে ফুসে পড়েন তারা।

এলাকাবাসী জানান, মাঠের কোন অংশে যদি প্লট দিয়ে বাড়ি বানানো যায় তবে পরবর্তীতে এমন ঘটনা আবারো হবে। ধীরে ধীরে মাঠটি বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয় শিশু, কিশোরেরা তাদের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হারাবে। এই মাঠটিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টেরে আয়োজন করা হয়। এছাড়াও মাঠটির ঐতিহ্য সারা রাজশাহীতে পরিচিত। 

বুধবার মাঠ বাঁচাতে বিভিন্ন ব্যানার  ফেস্টুন নিয়ে সকাল থেকেই মাঠটি ঘিরে রাখেন তারা। এর মাত্র কয়েকশ গজ দূরেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং সাবেক মেয়র এএইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়ি। এলাকাবাসীর এমন সমস্যার কথা শুনে ছুটে আসেন তারা।

সকালে রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এসে মাঠটি পরিদর্শন করে যান। এরপর সেখানে আসেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। খবর পেয়ে সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাও উপস্থিত হন। এরপর তারা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে মাঠ রক্ষা করা হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। ডাকা হয় রাজশাহী হাউজিং এস্টেটের নির্বাহী প্রকোৗশলী পরিমল কুমার কুরিকে। তার উপস্থিতিতেই প্লটের জায়গা কমিয়ে এনে বাড়ি নির্মানের জন্য সীমানা করে দেয়া হয়।

এলাকাবাসীদের উদ্দেশ্যে রাসিক সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এই মাঠটিতে আমাদের শৈশব কেটেছে। মাঠটিকে কোন ভাবেই হারাতে দেয়া যায়না। কিন্তু ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি ইতোমধ্যে প্লট আকারে জায়গা হাউজিংএর কাছে নিয়েছেন । জায়গাটি তার ভোগ দখলের অধিকার রয়েছে। এমন একজন শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তির অধিকার আমরা ছিন্ন করতে পারিনা। তাই তাকে অনুরোধ করে জায়গাটি কমিয়ে এনে মাঠের জায়গা ঠিক রাখার কথা বলেছি। এতে তিনিও সম্মতি দেন।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে খেলার মাঠের অনেক অভাব। এমন পরিস্থিতিতে একটি মাঠ হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংসের পথে চলে যাবে। তারা মাদকসহ অন্যান্য নেশায় জড়িয়ে পড়বে। আমরা চাই এই এলাকার সন্তানেরা সুষ্ঠ বিনোদনের মধ্যে দিয়ে বড় হোক। এই অবহেলিত রাজেশাহীর সুনাম বয়ে আনুক। তাই তাদের খেলাধুলার যেন কোন সমস্যা না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য থাকবে।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এই মাঠটিকে বাঁচাতে স্থানীয়রা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। এই মাঠটিকে আরও প্রশস্ত করা হবে। যে টাঙ্কিটা এতোদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে সেটিকে ভেঙ্গে পশ্চিমে বাড়িয়ে দেয়া হবে। যাতে মাঠের জায়গা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই-ই না মাঠের চারপাশ দিয়ে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে আরও সৌন্দর্য বর্ধিত করা হবে।

পরে এলাকাসীর উপস্থিতিতে প্লটের জায়গা কমিয়ে এনে সাীমানা মেপে খুটি পুঁতে দেয়া হয় এবং ভাষা সৈনিককে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার জন্য হাউজিং এস্টেটের নির্বাহী প্রকৌশলী পরিমল কুমার কুরিকে নির্দেশ দেন সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা

স/শ