খুলনায় বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিপেটা, আটক ৫

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

খুলনায় বিএনপির মিছিলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মিছিলে বাধা দেওয়ায় বিএনপি নেতারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৪ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে।

৫ জানুয়ারি বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে নগরের সদর থানা মোড়-সংলগ্ন কেডি ঘোষ রোডের বিএনপি কার্যালয় চত্বরের খুলনা নগর বিএনপি আয়োজিত কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ শুরুর আগে সমাবেশে আসা মিছিলে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্র থেকে দিবসটি পালনে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে নগর বিএনপির সমাবেশের কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল কর্মসূচিতে যোগ দেয়। বেলা সোয়া ১১টায় খালিশপুর থানা বিএনপির একটি মিছিল পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে থানার মোড়ে পৌঁছালে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা মিছিলের পেছনে লাঠিপেটা শুরু করেন।

এতে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছোটাছুটি শুরু করলে সমাবেশস্থলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ সমাবেশের অবস্থানরত নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, লাঠিপেটা, চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে এই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পুলিশের লাঠিপেটা এবং নেতা-কর্মীদের ইটপাটকেল ও চেয়ার নিক্ষেপের সময় অন্তত ১৪ নেতা-কর্মী আহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন খালিশপুর ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুবদল নেতা মেহেদি হাসান, রুহুল, লিপু মল্লিক ও কুদ্দুস।

দলীয় সূত্র জানায়, লাঠিপেটার সময় খালিশপুর থানা নেতা আল আমিনের পা ভেঙে যায়। তাঁকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে বিউটি বেগম ও হোসনে আরা নামের দুই নারী কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় দৌলতপুর থানা যুবদল নেতা জি এম মাসুদুল হকের মোবাইল ফোনটি তাঁর হাত থেকে এক পুলিশ কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘পিকচার প্যালেসের দিক থেকে থানা মোড়ের দিকে মিছিল নিয়ে আসার সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকেন। পুলিশ নিষেধ করা সত্ত্বেও তাঁরা শোনেননি। এরপর আমরা লাঠিপেটা করেছি। সেখান থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।’

এ ঘটনার পর বিএনপি কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। সমাবেশ শেষে দুপুর পৌনে একটায় নগরে কালো পতাকা মিছিল বের করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। কিন্তু থানার মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপিকে রাজপথে দেখলে পতন-আতঙ্ক শুরু হয়। অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পেটোয়া পুলিশ বাহিনী বিএনপির ওপর হায়েনার মতো হামলা পড়ে।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘হামলা চালিয়ে, মামলা দিয়ে, জেলে পুরে খুলনা বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমন করা যাবে না। খুলনায় ৬৪ মামলায় ১২৮ চার্জশিটের আসামি। আরও এক শ মামলার আসামি হওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। আমাদের মামলার ভয় দেখাবেন না।’

পুলিশকে উদ্দেশ করে নজরুল ইসলাম বলেন, খুলনা মাটি বিএনপির ঘাঁটি। এখানে চাকরি করতে হলে প্রজাতন্ত্রের সেবা করতে হবে। এখানে বসে অবৈধ সরকারের তাঁবেদারি করা চলবে না।

নগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, মীর কায়সেদ আলী, ফজলে হালিম লিটন, ফখরুল আলম, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, রেহানা আক্তার, মাহবুব হাসান পিয়ারু, আজিজুল হাসান দুলু, মুজিবর রহমান, কামরান হাসান, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। প্রথম আলো