রবিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ক্রিকেট জুয়ায় রাজশাহীর কোটিপতি ওরা, নিঃস্ব অনেকেই

Paris
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯ ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় সুমন (৩৫)। বছর দুয়েক আগেও নগরীর আরডিএ মার্কেটে ছিল তাঁর ক্রোকারিজের ব্যবসা। এই ব্যবসা করে খুব ভালোভাবেই সংসার চলত তার। প্রায় ১২ বছর আগে শুরু করা এই ব্যবসার মাধ্যমে মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় হতো। সেই আয় দিয়ে সুমনের সংসারে নেমে এসেছিলো স্বাচ্ছল্য। কিন্তু এখন তিনি নিঃস্ব। এতোটাই নিঃস্ব যে, জুয়ার টাকা পরিশোধের জন্য তাঁর বাবার শেষ সম্বল বাড়ির ভিটাটুকুও বিক্রি করতে হয়েছে। মাত্র দেড় কাঠার ওই জমি বিক্রি করেও মেটেনি জুয়ার দেনা সুমনের। এমনটিই জানিয়েছেন তিনি। এখনো পাওনাদারদের চাপে কখনো কখনো বাড়িছাড়া হয়ে থাকেন। পরিবার নিয়ে থাকেন পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুমনের মতো রাজশাহী নগরজুড়ে শত শত যুবক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ ক্রিকেট জুয়ায় এখন নিঃস্ব। তাদের কেউ কেউ এখনো বাড়িছাড়া, কেউ কেউ দেনা মেটাতে পড়েছেন ধারদেনাই, আবার কেউ কেউ ছেড়েছেন সংসার। কিন্তু এই জুয়া পরিচালনা করে একেকজন হয়েছেন কোটিপতি। একসময়ে যাদের দিন চলতো কোনোমতে, তারা এখন রাজশাহী শহরে জমি, বাড়ি ও গাড়ী।

জুয়ায় নিঃস্ব হওয়া সুমন জানান, তিনি বছর দেড়েক আগে মোবাইলের মাধ্যমে আইপিএল ও বিপিএল চলাকালীন সময়ে জুয়ায় আশক্ত হয়ে পড়েন। এরপর দিনের পর দিন লোকসান গুনতে গুনতে তাল ক্রোকারিজের ব্যবসাও গুটিয়ে ফেলতে হয় একসময়। তারপরেও ক্রিকেট জুয়াড়িদের কাছে দেনায় পড়েন অন্তত ১৭ লাখ টাকা।

শেষে বাবার বাড়ির ভিটাটা বিক্রি করে কোনো মতে দেনা শোধ করেন তিনি। তবে এখনো অন্তত ৪ লাখ টাকা দেনা রয়েছে তাঁর। এই টাকার জন্য জুয়াড়িরা মাঝে-মধ্যেই আসে তাঁর কাছে। ভয়ে এখনো মাঝে ধ্যেই বাড়িছাড়া হয়ে থাকতে হয় তাঁকে।

সুমনের মতো জুয়ায় নিঃস্ব হওয়া তেরোখাদিয়া এলাকার আজিবুর রহমান (ছদ্দ নাম) জানান, ‘শত শত যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নিঃস্ব হয়েছে এই ক্রিকেট জুয়ায়। তিনি এক সময় সবজি ব্যবসা করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এখন ব্যবসা হারিয়েছেন। পাশাপাশি অন্তত ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাসা ছেড়ে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইপিএল, বিপিএল শুরু হলে রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর, শালবাগান মোড়, উপশহর, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, সপুরা মোড়, পাঠানপাড়া ও কোর্ট বাজার এলাকায় বসে জুয়ার আসর। এসব এছাড়াও বিশ^কাপ ক্রিকেট, বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে যে কোনো বড় আসর পৃথিবীজুড়ে যেখানেই বসুক না কেনো রাজশাহীর জুয়াড়িরা মেতে উঠে জুয়ায়।

আর এই জুয়া নিয়ন্ত্রণ করে মাঝখানে থেকে লাখোপতি থেকে শুরু করে কোটিপতি বনেও গেছেন অনেকে। এদের কেউ এখন গাড়ী-বাড়ি, শো-রুমসহ ও জমির মালিক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুয়ার নিয়ন্ত্রণ করে কোটিপিত বনে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী নগরীর সপুরা এলাকার জীবন, কোর্ট এলাকার মোহন,

দাসপুকুর এলাকার শাহলমগীর ওরেফে শাল্লু, লক্ষীপুর এলাকার হযরত ও পারভেজ। আর লাখোপতি বনে যাওয়াদের মধ্যে রয়েছে কাদিরগঞ্জ এলাকার তূষার, লক্ষীপুরের রবিউল, পাঠানপাড়ার রাজেশ, উপশহরের রাশেল, আলুপট্টি এলাকার নয়নসহ আরো অন্তত ১০-১৫ জন।

এদের নিয়ন্ত্রণেই রাজশাহীতে পারিচালিত হয় জুয়া। সাধারণত মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে বা কল করে জুয়ায় বাজি ধরেন জুয়াড়িরা। আবার কেউ কেউ সরাসরি দেখা করেও এই বাজিতে লিপ্ত হোন।

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন একসময়ে একজন যুবক। তিনি জুয়ায় ১৭ লাখ টাকা দেনা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন পথে পথে ঘুরেন। দলের পদটিও হারিয়েছেন এই দেনার দায়ে।

বিসয়টি স্বীকার করে মহানগর যুবলীগের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তিনি আমাদেরই দলের লোক ছিলেন। কিন্তু জুয়ায় এতো টাকা দেনায় জড়িয়ে পড়েন যে, তার জন্য বার বার শালিস করতে হতো আমাদের। শেষে দল থেকেই বহিস্কার করতে বাধ্য হয়েছি। এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। দেনায় জীবন কাটাচ্ছেন বলে শুনেছি।’

অপরদিকে ক্রিকেট ও ফুটবল জুয়ার পাশাপাশি নগরীর অন্তত অর্ধশত পয়েন্টে তাসের মাধ্যমেও চলত জুয়ার আসর। এসব জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করতেন সরকার দলের অনেক নেতাকর্মী। আবার রাজশাহীর কয়েকজন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও জড়িত ছিলেন এ জুয়ায়। পুলিশের একাধিক সদস্যও এই জুয়ার মদদাতা।

এ নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশও হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর গত বছর একদিনে পুলিশ ১৩টি জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৪০ জনকে আটকও করেছিল। এরপর নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদধারী এক নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন জুয়ার আসর থেকে ১৩ জনকে আটক করেছিলো পুলিশ। তবে দেশজুড়ে জুয়ার আসরে অভিযানের পর রাজশাহীতে অনেকটায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে তাসের মাধ্যমে জুয়া খেলা। কিন্তু ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচ হলেই এখনো মোবাইলে চলছে জুয়া।

এদিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, জুয়ার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেনো আমরা এদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিব। প্রশাসনকে সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, এই ধরনের জুয়ার বিরুদ্ধে আমরা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অভিযান করেছি। তবে এখনো অভিযোগ পেলে অভিযান চালানো হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর