ক্রিকেটের নেশায় ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক

চলতি ওয়ানডে ফরম্যাটের নারী বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। কিন্তু ম্যাচের আলোচনা ছাপিয়ে সব আলো কেড়ে নিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ এবং তার ৬ মাস বয়সী শিশুকন্যা ফাতেমা।  রবিবার ম্যাচের পর সেই ফাতেমার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ভারতীয় দল। সেই মুহূর্তগুলোর ছবি-ভিডিও সোশ্যাল সাইটে ভাইরাল হয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসার বন্যা বয়ে যায়।

গত বছর আগস্টে মা হয়েছেন বিসমাহ। এরপর দলেও ফিরে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন।  কিন্তু মাতৃত্বের কারণে এক সময় খেলা ছাড়ার কথাও ভাবতে হয়েছিল বিসমাহকে। মা হওয়ার খবর যে দিন পেলেন, ভেবেছিলেন তার ক্রিকেটজীবন হয়তো শেষ। পাকিস্তানের মতো দেশে মাতৃত্বের পর খেলায় ফিরে আসার ঘটনা নেই বললেই চলে! কিন্তু বিসমাহ হারতে চাননি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে ফিরে এসেছেন। তার পাশে ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

মাতৃত্বের খবর জানিয়ে এপ্রিল মাসেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে ছুটিতে যান বিসমাহ। দলের কোচ ডেভিড হেম্প এবং বোর্ডের সহযোগিতায় তিনি আবারও ক্রিকেটে ফিরে আসেন। ওই সময় পিসিবি একটি নীতি চালু করে, যেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেটাররা এক বছর বেতন পাবেন এবং পরের বছর চুক্তিও নবায়ন করা হবে। এতেই অনুপ্রাণিত হয়ে ক্রিকেটে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন বিসমাহ। এছাড়া বিসমাহর মা তাকে সবসময় সহযোগিতা করে গেছেন।

অথচ, বিসমাহর হয়তো ক্রিকেটার হওয়াই হতো না! ১৯৯১ সালের ১৮ জুলাই লাহৌরে এক কাশ্মীরী পরিবারে জন্ম বিসমাহর। বাড়ির লোকজন মেয়েদের ক্রিকেট খেলা পছন্দ করতেন না। তবে তারা চেয়েছিলেন, মেয়ে পড়াশুনো করে ডাক্তার হোক। কিন্তু স্কুলজীবনের শেষের দিক থেকে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে বিসমাহর। সেই আগ্রহ এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেয়েও ক্রিকেট খেলার জন্য তিনি পড়াশুনো ছেড়ে দেন! সেখানেই তার ডাক্তার হওয়ার পর্বের ইতি ঘটে।

ডাক্তারি ছেড়ে ভুল করেননি বিসমাহ। কারণ ক্রিকেট তাকে দুহাত ভরে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ২০০৯ নারী বিশ্বকাপে প্রথম পাকিস্তান দলে ডাক পান। পরের বছর এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী পাকিস্তান দলের সদস্য ছিলেন।  ২০১৭ সালে পাকিস্তান দলকে প্রথমবার নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বেই শ্রীলঙ্কাকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ধোলাই করে পাকিস্তান। পরের বছর নারীদের এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনায়ক হলেও আঙুলের চোটে ছিটকে যান। পাকিস্তানের দ্রুততম নারী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০০ রান করেছেন তিনি।

বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে এক সাক্ষাতকারে বিসমাহ বলেছিলেন, ‘একজন শিশু সন্তানের জন্য মায়ের প্রয়োজন আছে। আমি ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গেলে সন্তানকে দেখবে কে? আমি মাঠে থাকার সময় কে ওর খেয়াল রাখবে? কোনো পরিচারককে সবসময় সঙ্গে রাখা খুব খরচের ব্যাপার। পাকিস্তানের নারী ক্রিকেটাররা এখনও সেরকম বেতন পায় না। কিন্তু বোর্ডের নীতি না থাকলে আমি ক্রিকেটে ফিরতে পারতাম না। এখন আমার মেয়ে দলের সঙ্গে থাকলে মনটাও ফুরফুরে থাকে। ওকে দেখলেই যেন সবার চিন্তা দূর হয়ে যায়। ‘

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ