ক্রিকেটটা আত্মা দিয়ে খেলতে হয়, শেখালেন পাইলট!

আব্দুল্লাহ আল মারুফ:

ক্লেমন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে মুখোমুখি রাজশাহী সিক্সার্স ও মুক্তিযোদ্ধা ক্রিকেট ক্লাব, দুপচাঁচিয়া বগুড়া! প্রথমে ব্যাট করে রাজশাহী সিক্সার্সের সংগ্রহ ১১৬ রান! জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সিক্সার্সের চোখে চোখ রেখেই লড়ে চলেছে বগুড়ার ক্লাবটি! শেষ বলে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন মাত্র চার রান। ইনিংসের শেষ বলটি করলেন সিক্সার্সের বোলার! স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা মুক্তিযোদ্ধা ক্রিকেট ক্লাবের ব্যাটারের চমৎকার ড্রাইভ, যা দেখে মাথায় হাত সিক্সার্সের বোলারসহ সকল খেলোয়ারের! এমন একটি ড্রাইভ থেকে বাউন্ডারি হওয়াটাই যে স্বাভাবিক!

কিন্তু না, তখনও যে মাঠে উপস্থিত এমন একজন মানুষ, যে মানুষটি এক যুগ (১৯৯৫-২০০৭) হৃদয় দিয়ে আগলে রেখেছিলেন এই দেশের ক্রিকেটটাকে! যে মানুষটি এ দেশের ক্রিকেট রুপকথার অন্যতম নায়ক! কাকতালীয় ভাবে ব্যাটারের করা ড্রাইভ থেকে বল বাউন্ডারির পথ ধরে বাংলাদেশকে আগলে রাখা, বাংলাদেশের ক্রিকেটে রুপকথার জন্ম দেওয়া সেই মানুষটির মাথার উপর দিয়েই!

যার কাছে ক্রিকেটই ধ্যান জ্ঞান, তাঁর কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই কি, আর স্থানীয় বা গলির ক্রিকেটই বা কি! তাঁর কাছে তো ক্রিকেটের একটাই পরিচয়, একটাই সংজ্ঞা, Cricket is only cricket, which has to be played with heart! বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শূন্যে উড়লেন তিনি, আটকে দিলেন নিশ্চিত বাউন্ডারি হতে যাওয়া বলটিকে! বাঁচালেন মহামূল্যবান দু’টি রান! নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচালেন নিজ দল, রাজশাহী সিক্সার্সকে।

তবে, নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে দলকে রক্ষা করতে পারলেও রক্ষা করতে পারেননি নিজের বাম হাত টাকে! শূন্যে ভেসে বলের গতিরোধ করে মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই গুরুতর আহত হন দেশের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার, খালেদ মাসুদ পাইলট। তাৎক্ষণাৎ নেওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে সকল ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাঁর বাম হাত ভাঙ্গার খবরটি নিশ্চিত করেন। মুহূর্তেই রাজ্যের হতাশা নেমে আসে নাটকীয় জয়ে আনন্দিত হওয়ার পরিবর্তে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকা রাজশাহী সিক্সার্সের ক্রিকেটারদের পাশাপাশি রাজশাহীর সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে।

একই দলে খেলা ক্রিকেট কোচ শিবলি সাদিক জানান, ‘শেষ বলে জয়ের জন্য প্রতিপক্ষের প্রয়োজন ছিলো মাত্র চার রান। শেষ বলে ব্যাটার চমৎকার একটি শটও খেলেন, যা বাউন্ডারি হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু ব্যাটারের সেই শটটি অবিশ্বাস্য ভাবে শূন্যে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন পাইলট ভাই। এতে করে আমাদের দল এক রানের জয় পেলেও তিনি গুরুতর আহত হন। সাথে সাথেই তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সকল ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে শঙ্কামুক্ত ঘোষণা করলেও তাঁর বাম হাতের হাড় ভাঙ্গার খবরটি নিশ্চিত করেন এবং কয়েকদিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন।’

এদিকে, ফর্মার্স ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য জনাব স্বাধীন এক ভিডিও বার্তায় পাইলটের আহত হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করে বলেন, ‘পাইলটের বাম হাতটি ভেঙ্গে গেছে, ডাক্তার তাঁর হাতটি প্লাস্টার করে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন’

তবে বিশ্রামে থাকার পরিবর্তে সবাইকে অবাক করে ক্লেমন টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আজকের ম্যাচটি দেখতে মাঠে হাজির হন খালেদ মাসুদ পাইলট! এ সময় তিনি জানান ‘হাতের হাড় পুরোপুরি ভেঙ্গে আলাদা হয়ে গেছে। চিকিৎসক প্লাস্টার করে দিয়েছেন। আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার সার্জারি করতে হবে।’

এদিকে, গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফিল্ডিং করতে গিয়ে পাইলটের আহত হওয়ার খবরটি প্রকাশের সাথে সাথে তা পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দেয়। সকলেই আহত পাইলটের আশু আরোগ্য কামনা করেন। এ সময় নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পাঠকরা, এই বয়সে তাঁর মাঠে থাকার বিষয়টির ভূয়সী প্রসংসা করে বলেন, ‘ক্রিকেট খেললে এভাবেই খেলা উচিৎ, আত্মা দিয়ে খেলা উচিত, হৃদয় দিয়ে খেলা উচিত!’

উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার ফিল্ডিং করতে গিয়ে গুরুতর আহত হন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলট। রাজশাহী মহিলা ক্রীড়া কম্প্লেক্স গ্রাউন্ডে ক্লেমন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে রাজশাহী সিক্সার্স ও মুক্তিযোদ্ধা ক্রিকেট ক্লাব, দুপচাঁচিয়া বগুড়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচ চলাকালীন সময়ে এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে। এতে করে বাম হাতের হাড় ভেঙ্গে যায় রাজশাহী সিক্সার্সের হয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশের এই সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটারের! এর আগে ১৯৯৭ সালের ২০ জুলাই শ্রীলংকায় মুখে বলের আঘাতে আহত হন পাইলট! সে ঘটনায় দুটি দাঁত হারান তিনি!