কোহলি-পান্ডিয়ার পক্ষে সাফাই গাইলেন অস্ট্রেলিয়ান দোকানি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্কঃ

অস্ট্রেলিয়া সফরের শেষ দিকে এসে ভারত দলকে ঘিরে যেন একের পর এক সব বিতর্কিত খবর আসছে।

রোহিত শর্মা, ঋষভ পন্তরা জৈব সুরক্ষা বলয় ছেড়ে বেরিয়ে বাইরে খেতে গিয়ে বিতর্ক ছড়ালেন। এরপর ব্রিসবেনে আবার কোয়ারেন্টিন মানতে হবে শুনে ভারত বেঁকে বসল, এভাবে কোয়ারেন্টিন মানতে হলে তারা ব্রিসবেন যাবে না। ব্রিসবেন টেস্টই তাই পড়ে গেছে শঙ্কায়। ওদিকে অস্ট্রেলিয়ানরা বলছে, ভারত ব্রিসবেনের গ্যাবার পিচে খেলতে ভয় পাচ্ছে বলে সেখানে যেতে চাইছে না!

এর মধ্যে নতুন করে পুরোনো এক ঘটনা বিতর্ক ছড়িয়েছে! অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম জানাল, এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে দেশে ফিরে আসা বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সময়ে জৈব সুরক্ষা বলয় ভেঙে এক দোকানে গিয়েছেন। তবে সেই দোকানি এখন কোহলি-পান্ডিয়ার পক্ষে কথা বলছেন। ভারতীয় দুই ক্রিকেটার ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনে চলেছেন বলেই জানাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান সেই দোকানি।

কোহলি-পান্ডিয়াকে ঘিরে বিতর্কটা মাসখানেক পুরোনো এক ঘটনার। গত ৭ ডিসেম্বর দলের হোটেল ছেড়ে একটি দোকানে গিয়েছিলেন দুজন। ‘বেবিভিলেজ’ নামের সেই দোকান মূলত শিশুদের খেলনা ও কাপড়ের দোকান। সেখানে কোহলি-পান্ডিয়ার যাওয়ার কারণ সহজেই অনুমেয়। পান্ডিয়া সম্প্রতি সন্তানের বাবা হয়েছেন, ভারত অধিনায়ক কোহলির ঘরে সন্তান আসার কথা এই জানুয়ারি মাসে।

কোহলি-পান্ডিয়াকে নিজেদের দোকানে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ‘বেবিভিলেজ’ দুজনের সঙ্গে দোকানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছবি নিজেদের ইনস্টাগ্রামে দিয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, কোহলি ও পান্ডিয়ার মুখে মাস্ক নেই। এত দিন পর সেটি এসেছে আলোচনায়।

কোহলি-পান্ডিয়া অস্ট্রেলিয়া ছেড়েছেন দিন বিশেক আগে। প্রথম সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রী আনুশকা শর্মার পাশে থাকতে প্রথম টেস্টের পরই ভারতে ফিরে এসেছেন কোহলি। পান্ডিয়া অস্ট্রেলিয়া সফরের টেস্ট দলেই ছিলেন না।

এই বিতর্কে কোহলি আর পান্ডিয়াকে সমর্থন জানাতে এবার এগিয়ে এসেছেন সেই দোকানিই। বেবিভিলেজ নামে সেই দোকানের মালিক ন্যাথান পনগ্রাসের দাবি, দুই খেলোয়াড়ই সে সময়ে নিউ সাউথ ওয়েলসে করোনাবিষয়ক যত নিয়মকানুন ছিল, সেগুলো মেনে চলেছেন।

কোহলি-পান্ডিয়ার মাস্ক না পরা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলতে দেয় না সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক খবর। সেখানে লেখা, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি করোনার সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ৩ জানুয়ারি থেকে নিউ সাউথ ওয়েলসে মাস্ক পরা আবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সে হিসেবে কোহলিরা যখন দোকানটিতে গেছেন, অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর, তখন মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা ছিল না।

অস্ট্রেলিয়ার স্পোর্টস টুডেতে পনগ্রাসও কোহলি-পান্ডিয়ারা সব নিয়ম মেনে চলেছেন জানিয়ে বলছেন, ‘তাঁরা এসে অল্প কিছু সময়ই ছিলেন। সে সময়ে নিউ সাউথ ওয়েলসে করোনাবিষয়ক কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। তাঁদের ছোঁয়ার, তাঁদের সঙ্গে হাত মেলানোর অনুমতি ছিল না আমাদের দোকানের কর্মচারীদের। যদিও সে সময়ে করোনাবিষয়ক নিয়মকানুন তেমন ছিল না, তাঁরা দুজন বেশ সামাজিক দূরত্ব মেনেই ছিলেন।’

কোহলিদের মাস্ক না পরার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পনগ্রাস, ‘যতটুকু মনে পড়ে, তাঁরা মাস্ক পরেননি। যেটা আগেই বলেছেন, সে সময় নিউ সাউথ ওয়েলসে করোনায় নতুন আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। রাস্তায় নামলে তখন দেখা যেত, প্রতি ৫০ জনে হয়তো ১ জন মাস্ক পরছেন। বয়স্ক মানুষেরা হয়তো মাস্ক পরতেন। এমনকি গর্ভবতী অনেক নারীও মাস্ক পরতেন না তখন।’

তাঁর দোকানে যতটুকু সময় ছিলেন কোহলি ও পান্ডিয়া, তাতে ভারতীয় দুই ক্রিকেটারের আচরণে মুগ্ধ পনগ্রাস, ‘আমরা তাঁদের কিছু উপহার দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা সবকিছুর দাম দিয়েই কিনতে চাইলেন। যতটুকু সময় ছিলেন, এত বিনয়ী ছিলেন তাঁরা! আমাদের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দারুণ মানুষ তাঁরা! আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ছবি তোলার অনুমতিও দিয়েছেন। যেটা আমাদের কর্মচারীরা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চেয়েছেন। আমরা সেই ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়েছি শুধু এটা বোঝাতে যে তাঁরা আমাদের দোকানকে বেছে নেওয়ায় আমরা গর্বিত।’

তবে সেসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে এত মাতামাতি হওয়ায় একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন পনগ্রাস, ‘তাঁদের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা অনেক ভালো। সেটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যা হচ্ছে, সেটা দেখে খারাপ লেগেছে।’

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারতের চার টেস্ট সিরিজের তৃতীয়টি আগামীকাল ভোরে শুরু হচ্ছে সিডনিতে। সিরিজ এখন ১-১ সমতায়।

সুত্রঃপ্রথম আলো।