কোরবানির বাজারে ভারত থেকে গরু আসুক, চাননা রাজশাহীর খামারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদুল আজহার আর মাত্র দিন পনেরো বাকি থাকলেও এখনো জমেনি রাজশাহীর কোরবানির হাটগুলো। অথচ অন্যান্য বছরগুলোতে এই সময়েই জমে উঠে জেলার সিটি হাট থেকে শুরু করে উপজেলা সদরের হাটগুলোও।

গতকাল সোমবার ও আগেরদিন রবিবার রাজশাহীর বিভিন্ন হাটে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে। তবে হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু আসছে-যাচ্ছে। কিন্তু বেচা-কেনা জমে উঠেনি এখনো। ফলে অধিকাংশ গরু নিয়েই ফেরত যাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। এদিকে কেনাবেচা এখনো জমে না উঠায় এবার কোরবানির পশুর দাম কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে-তা নিয়ে এখনো রীতিমত ধন্দে রাজশাহীর ক্রেতা-বিক্রেতারা।

তবে এরই মধ্যে যেসব গরু কেনা-বেচা হচ্ছে, সেগুলো প্রতি মণ মাংস হিসেবে ২৩-২৪ হাজার টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। এই অবস্থা থাকলে গত বারের চেয়ে এবার একটু দাম বেশিই পড়বে বলেও জানিয়েছেন ক্রেতারা।

অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার গরু পালনের খরচ বেড়েছে। কিন্তু সেই হারে দাম বাড়েনি এবার গরুর। এর মধ্যে যদি ভারত থেকে গরু আসা শুরু হয়, তাহলে খামারিরা লোকসানের মধ্যে পড়বেন। কাজেই যেহেতু দেশেই পর্যাপ্ত গরু রয়েছে, সেহেতু ভারত থেকে গরু আসা পুরোপুরি বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন খামারিরা। তাহলে গরু পালন করে কিছু লাভের মুখ দেখবেন তারা। এতে গরুতে অনেক বেকারেরও আগ্রহ বাড়বে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও সৃষ্টি হবে গুরু পালনের মাধ্যমে।

রাজশাহী বৃহত্তর সিটি বাইপাস গরুর হাটে কথা হয় নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে গরু বিক্রি করতে আসা মন্টু নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি এই হাটে ৫টি গরু নিয়ে এসেছেন বিক্রি করতে। তিনি বলেন, ‘বাজার নরম। হাটে ক্রেতা কম। গরুর দাম বলতে চাচ্ছে না ক্রেতারা। তাই বেচা-বিক্রিও তেমন নাই। গরু নিয়ে বসে আছি। সন্ধ্যা অবদি দেখবো। বিক্রি না হলে দাম না পেলে আবার বাড়ি নিয়ে যাবো।’

মন্টু জানান, তিনি নিজেই খামারি। বাড়িতে গরু পালন করেন বছরজুড়ে। আর কোরবানির সময়ই বেশি পরিমাণ গরুর বিক্রি করেন। এবারো অন্তত ১৫টি গরু বিক্রি করবেন বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। প্রতি মণ মাংস হিসেব ২৩-২৪ হাজার টাকা এখনো বাজারে গরু বিক্রি হচ্ছে। এই বাজার পেলেও তিনি প্রতিটি গরু থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা করে লাভ করবেন। কিন্তু এর চেয়ে বাজার কমে গেলে গরু পালন করে লোকসান হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

জেলার দুর্গাপুরের আরেক খামারি হাবিব বলেন, ‘গত বারের চেয়ে এবার গরুর দামে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখছি না। কিন্তু গতবারের শুরুতে যেমন দাম ছিল, এবার তেমনই মনে হচ্ছে। অথচ গত বারের চেয়ে এবার গরু পালনে খরচ কিছুটা হলেও বেড়েছে। কাহেই এবার এখন পর্যন্ত যে দাম আছে, তাতেও খামারিদের লোকসান হবে না। কিন্তু এরই মধ্যে ঈদের আগে আগে ভারত থেকে গরু আসতে শুরু করে ,তাহলে দাম কমে যাবে আরো। আমরা খামারিরা ক্ষতিরমুখে পড়বো। তাই আমরা চাই ভারতীয় গরু এখন আর না আসুক।


শনিবার জেলার বানেশ্বর হাটের গরু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, কোরবানির পশুর বাজার এখনো জমেনি। কোরবানির দেরি থাকায় মানুষ হাটে আসছে গরু দেখতেই বেশি। তবে কেউ কেউ কিনেও নিচ্ছে দামে হলে।

অন্যদিকে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অন্তিম কুমার সরকার সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, জেলার ৯ উপজেলায় ১৭ হাজার ৭০০ খামার রয়েছে। যেখানে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৪ কোরবানির পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় ৭১ হাজার ৮৩১, বকনা গরু ৬ হাজার ১৮, মহিষ দুই হাজার ৬৭৫, ছাগল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫ ও ভেড়া ১৩ হাজার ৬৭৫ এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ১ হাজার ১৩৬। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সাধারণত ২ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে চাহিদা নির্ধারণ করা হয়। তবে এটি সম্ভাব্য হিসাব। তবে দেশি গরুতেই চাহিদা পূরণ হবে বলেও ধরে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, অনেক মানুষের পশু রাখার মত জায়গা নেই। তারা ঈদের দুই-একদিন আগে কোরানির পশু কিনবেন। এছাড়া অনেকেই প্রতিবেশীর নিকট থেকেও পশু কিনছে। যেনো ঈদের আগের দিন নিয়ে কোরবানি দিতে পারেন। ফলে হাটগুলো এখনো জমেনি শুনেছি। তবে ঈদের আগে ঠিকই জমে যাবে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ভারত থেকে গরু আসলে দেশি খামারিরা ক্ষতিরমুখে পড়বেন। তাই আমরা ভারতীয় গরুতে নিরুৎসাহীত করে থাকি। দেশি খামারিরা এই সময়ে কিছু লাভবান হলে দেশের মানুষের উপকার হবে। অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে। আবার লোকসান হলে অনেক মানুষই আর্থিকভাবে ক্ষতিরমুখে পড়েন। যা তারা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারেন না। এ কারণে কোরবানির ঈদের সময় গরু বিক্রি করে খামারিরা লাভবান হলে দেশেরই লাভ হয়। অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়।

স/অ