কোরআন না বুঝে পড়ার কারণে যে ১০টি জিনিস মিস করছেন

আল-কোরআন মানবজাতির পথপ্রদর্শক। যেহেতু কেউই পথভ্রষ্ট হতে চায় না, তাই শুধুমাত্র কোরআন পাঠ বা তিলাওয়াত করলেই হবে না; বরং কোরআনের অর্থ বুঝে নিজেদের জীবনে এর শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে।

কোরআন না বুঝে পড়লে এতে থাকা কোনো শিক্ষা কিংবা নির্দেশনা জানা যায় না। ফলে কোরআনে বিদ্যমান মূল্যবান সবকিছু থেকেই বঞ্চিত হতে হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

ওহির উদ্দেশ্য

না বুঝে শুধু পড়তে থাকলে কোরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, এটি একটি বরকতময় কিতাব যা আমি আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি যাতে করে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গবেষণা করে। (সুরা ছোয়াদ: ২৯)

আর কোরআনে অর্থ বুঝার চেষ্টা না করলে এর আয়াতসমূহ নিয়ে গবেষণা করা তো অসম্ভব একটি ব্যাপার।

মনের বাগানে চাষ করা

মানব মন একটি ফুল বাগানের মত। যত্ন না নিলে এতে আগাছা জন্মায়। আর তাই নিয়মিত মনের বাগানে জন্ম নেয়া এই আগাছা পরিষ্কার করতে হয়।

মনের বাগানের ফুল হল কোরআন; আর আগাছা হল শয়তানের কুপ্ররোচনা। সুতরাং মনরূপ বাগানে ফুলরূপ কোরআন চাষ করে যদি যথাযথ পরিচর্যা করা না যায় অর্থাৎ আয়াতসমূহ নিয়ে গবেষণা করা না হয়, তাহলে সেখানে অবশ্যই আগাছারূপ শয়তানের কুপ্ররোচনা জন্ম নেবে।

তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য

কোরআন তিলাওয়াতের পাঁচটি প্রধান উদ্দেশ্য রয়েছে-

১. আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে তিলাওয়াতের পুরস্কার লাভ করা

২. জ্ঞানার্জন করা

৩. কোরআনে বর্ণিত আল্লাহর আদেশ ও নিষেধসমূহ মেনে চলা

৪. হৃদয় ও মনের চিকিৎসা করা

৫. আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথা বলা।

প্রথম উদ্দেশ্যটি অর্জন করা গেলেও কোরআন না বুঝে পাঠ করলে পরের চারটি উদ্দেশ্য সাধন করা একেবারে অসম্ভব।

অন্তর পরিশোধন

অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, কোরআন শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ-নিষেধ সম্বলিত একটি কিতাব। কিন্তু আসল কথা হল, কোরআনের মাত্র ১০ ভাগ আয়াতে আদেশ-নিষেধ বর্ণিত হয়েছে; আর বাকি ৯০ ভাগ আয়াতেই মানুষের হৃদয় ও অন্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, (এই কোরআনে) অন্তরসমূহের (রোগের) জন্য রয়েছে শেফা। (সুরা ইউনুস: ৫৭)

গুনাহের কাজ করার দ্বারা অন্তরে মরিচা পড়ে যায়, হৃদয় পঁচে যায়। তাই নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত ও এর অর্থ অনুধাবন করার মাধ্যমে হৃদয়ের চিকিৎসা করতে হয়, অন্তরকে পরিষ্কার করতে হয়।

হৃদয়কে শক্তিশালী করা

আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর অল্প অল্প করে কোরআন নাজিল করেছেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, কাফেরগণ জিজ্ঞেস করল, কোরআন তার (মুহাম্মদ সা. এর) ওপর একসঙ্গে নাজিল হলো না কেন?

কাফেরদের এই প্রশ্নের উত্তরে একই আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, (আমি কোরআন অল্প অল্প করে নাজিল করেছি) যাতে করে আপনার হৃদয় শক্তিশালী হয়। (সুরা ফুরকান: ৩২)

সুতরাং হৃদয়কে শক্তিশালী করতে হলে নিয়মিত কোরআনের অর্থ বুঝে বুঝে তিলাওয়াত করার কোনো বিকল্প নেই।

আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথোপকথন

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআন তিলাওয়াতের সময় আয়াতসমূহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতেন। যেমন- যখন তিনি আল্লাহতায়ালার প্রশংসা সম্বলিত কোনো আয়াত তিলাওয়াত করতেন, তখন তিনিও নিজে নিজে আল্লাহর প্রশংসা করতেন।

যখন কোনো প্রার্থনার আয়াত আসতো, তখন তিনিও প্রার্থনা করতেন, যখন কোনো আয়াতে আল্লাহতায়ালার আশ্রয় চাওয়া হতো, তখন তিনিও আল্লাহর আশ্রয় চাইতেন। (মুসলিম)

কিন্তু কোরআনের অর্থ না বুঝলে আয়াতসমূহের সঙ্গে এরকম মিথস্ক্রিয়া করার কথা কল্পনাও করা যায় না।

সরাসরি আল্লাহর নির্দেশনা

কোরআন থেকে যাই তিলাওয়াত করা হয় কিংবা শোনা হয়, তার সবটাই আল্লাহর পক্ষ হতে মানবজাতির প্রতি সরাসরি নির্দেশনা। অর্থ বুঝে তিলাওয়াত না করলে আল্লাহতায়ালার এই নির্দেশনা অজানাই থেকে যায় যা আল্লাহর একজন খাঁটি বান্দার পক্ষে অসম্ভব।

আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন

সালাত আদায় করা, রোজা পালন করা যদিও আল্লাহতায়ালার ফরজ বিধান; কিন্তু শুধুমাত্র ফরজ বিধানসমূহ পালন করার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়।

বরং আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে হৃদয়ে তার জন্য ভালোবাসা থাকতে হবে, তার প্রতিটি ফরজ বিধান পালনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা থাকতে হবে, তার ওপর সীমাহীন আস্থা রাখতে হবে, তার সৃষ্টিসমূহ নিয়ে গবেষণা করতে হবে।

আর কোরআনের অর্থসমূহ অনুধাবন না করলে ফরজ বিধানসমূহের পাশাপাশি হৃদয়কে পরিশোধিত করে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করা অসম্ভব।

কোরআনি চরিত্র

হজরত আয়েশাকে (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর চরিত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, তার চরিত্র হল আল কোরআন।

সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর চরিত্র হল আল কোরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তাই নবীজীর (সা.) সীরাত অধ্যয়ন করে তার সুমহান আদর্শ অনুসরণ করতে হলে কোরআন থেকে শিক্ষা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। কেননা তিনি নিজেই কোরআনের শিক্ষাকে অনুসরণ করে সুমহান চরিত্রের অধিকারী হয়েছেন।

আর তাই কোরআনি চরিত্র গঠন করতে হলে কোরআনের অর্থ অনুধাবনপূর্বক এর শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।

কোরআনি অন্তর্দৃষ্টি

জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়তই আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। অথচ কোরআনে মানবজীবনের সকল সমস্যারই সমাধান রয়েছে। কিন্তু আফসোস! নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করেও অর্থ না বোঝার কারণে এর থেকে সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অনেকের কাছেই কোরআন কেবল একটি তিলাওয়াতের কিতাবে পরিণত হয়েছে। ফলে কোরআনে বর্ণিত জীবনদর্শন ও গভীর অন্তর্দৃষ্টি অজানাই রয়ে যাচ্ছে।

কোরআন তিলাওয়াত করা মানে হল আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা; কিন্তু এটা কেমন যে, আল্লাহতায়ালা আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন, অথচ আমরা তা বুঝতে পারছি না!

 

সুত্রঃ যুগান্তর