সোমবার , ২৭ এপ্রিল ২০২০ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কোরআনের সুরে মুখরিত চারদিক

Paris
এপ্রিল ২৭, ২০২০ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

চলছে কোরআনের মাস রমজান। কোরআন চর্চায় আত্মার প্রশান্তি খোঁজে মুমিন এই মহিমান্বিত মাসে। তাই অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় এই মাসে কোরআনের তিলাওয়াত বেশি বিশ্বজুড়ে। মসজিদে মসজিদে হয় কোরআনের খতম। তাতে অংশগ্রহণ করে শিশু, কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ। তারা দল বেঁধে মসজিদে শামিল হয় আর হৃদয়ভরা তৃপ্তি নিয়ে ফিরে আসে। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে আত্মতৃপ্তির সুযোগ সংকুচিত হয়েছে। ভয়াবহ এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মসজিদে জমায়েতের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলে মসজিদে সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে কোরআন খতমের সুযোগ পাচ্ছেন না অনেক মুসল্লি। তাই বলে কি থেমে গেছেন কোরআনপ্রেমীরা? না, বরং প্রতি ঘর হয়ে উঠেছে একেকটি মসজিদ। আর তা মুখরিত হচ্ছে কোরআনের সুমধুর তিলাওয়াতে। ছোট ছোট পরিসরে, বাসা-বাড়ি, অফিসে হচ্ছে তারাবির জামাত। পরিবারের সদস্য, সহকর্মী কিংবা বন্ধুদের নিয়ে তারা খতম তারাবি পড়াচ্ছেন এমন কয়েকজন হাফিজের অভিজ্ঞতা পাঠকের সামনে পেশ করা হলো।

রাজধানীর জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ মাদরাসার মিশকাত জামাতের শিক্ষার্থী হেদায়েতুল্লাহ আরমান (১৯)। তিনি তার পরিবারের সঙ্গে তারাবি পড়ছেন। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আরমান বলেন, হিফজ সম্পন্ন করার পর বিগত পাঁচ-সাত বছর ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার একটি মসজিদে তারাবি পড়িয়ে আসছি। চলতি রমজানেও এখানেই পড়ানোর কথা ছিল; কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ স্বল্পপরিসরে সুরা তারাবির আয়োজন করেছে। শুরুতে কিছুটা মন খারাপ করেছিলাম। তবে পরিবারের সবার সহযোগিতায় আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্ত নিই এবং সাভারের নিজ বাসায় খতম তারাবির জামাত শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ!

তিনি আরো বলেন, পবিত্র রমজানে কোরআন তিলাওয়াত বন্ধ থাকবে—এটা একজন হাফেজের জন্য চরম হতাশাজনক। তাই আমরা বাসায় খতম তারাবি পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমার তিন ভাই, দুলাভাই ও আব্বু মিলে তারাবি আদায় করছি। হ্যাঁ, মসজিদে তারাবি পড়া ও পড়ানোর অনুভূতিটাই আলাদা। আল্লাহর কাছে দোয়া করি এমন রমজান আর যেন না আসে। আর তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেন। আমিন!

ঢাকার জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার ইফতা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিল হাসান (২৫)। বরাবরের মতো এ বছরও তিনি খতম তারাবি পড়াচ্ছেন। তবে চিত্রটা একটু ভিন্ন; এবার মসজিদে নয়, তিনি তারাবি পড়াচ্ছেন রাহমানিয়া মাদরাসার ইফতা বিভাগের প্রধান মুফতি হিফজুর রহমানের কক্ষে। মসজিদে জামাত সীমিত হওয়ায় শিক্ষকের পরামর্শে মাদরাসার কক্ষে তাবারি পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোয় দেশের একাধিক মসজিদে তারাবি পড়ানোর সুযোগ হয়েছে।  কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার মসজিদে তারাবি পড়ানোর সুযোগ নেই। তাই এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে উস্তাদজিসহ আমরা ছয়-সাতজন রাহমানিয়ার একটি কক্ষে খতম তারাবির জামাত করছি।

তানজিল হাসান আরো জানান, ১৫ রমজান তারাবিতে আমাদের খতম হবে ইনশাআল্লাহ! তবে আমরা খতম তারাবি পড়লেও সেসব কোরআনপ্রেমীর জন্য দুঃখ হচ্ছে, যাঁরা সারা দিন রোজা রেখে ক্লান্ত শরীরেও আল্লাহর কালাম শুনতে মসজিদে আসতেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা—সব কিছুই যেন তিনি স্বাভাবিক করে দেন।

কুমিল্লার হাফেজ আবদুল্লাহ হাশেমও (২৪) নিয়মিত তারাবি পড়ান। আরো অনেক হাফেজের মতো তিনিও নিজ বাসায় পরিবারের সঙ্গে খতম তারাবি পড়ছেন। তবে তাঁর অনুভূতি মিশ্র। দীর্ঘদিন পর রমজানে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পেরে কিছুটা আনন্দিত আবদুল্লাহ হাশেম। তবে সাধারণ মুসল্লিদের ভালোবাসার কথা মনে পড়ে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছর মসজিদে বড় জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ পড়তাম। অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হতো। মুসল্লিদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করত।

বিশ্বের অন্যান্য দেশেও হাফেজরা নিজ নিজ উদ্যোগে স্বল্পপরিসরে খতম তারাবির আয়োজন করেছেন। মিসরের বিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ জামিয়া আল-আজহারের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আবদুল আজিজ নিজের ক্যাম্পাস সম্পর্কে বলেন, অন্যান্য বছর আল-আজহারের শিক্ষার্থীরা আশপাশের মসজিদগুলোয় তারাবির জামাতে শামিল হতেন। কিন্তু সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকায় এবার সেটি হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হোস্টেল কিংবা মেসে আট-দশজন করে খতম তারাবির আয়োজন করেছেন। আমাদের কক্ষে কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা খতম তারাবির জামাত করছি।

স্পেনের বার্সেলোনা থেকে স্থানীয় মসজিদ কমপ্লেক্স দারুল কোরআন ইসলামিক সেন্টার, বার্সেলোনার খতিব তরুণ বাংলাদেশি আলেম আবদুল কাদির জানিয়েছেন, দেশটিতে সব ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে মসজিদগুলোতেও নামাজ হচ্ছে না। স্পেনের বিভিন্ন প্রদেশে সব মিলিয়ে ১০-১২টি বাংলাদেশি মসজিদ রয়েছে। সেগুলোর কার্যক্রমও সরকারি নির্দেশে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মুসল্লিরা নিজ ঘরে তারাবির জামাত করছেন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - ধর্ম