কৃষি ঋণেও বাড়ছে খেলাপি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

শিল্প ও সেবা খাতই নয়, কৃষকদের ঋণেও খেলাপি বাড়ছে। মাত্র এক মাসেই এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৫৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৫১ কোটি টাকাই বেড়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। সব মিলে গত জানুয়ারি শেষে কৃষি খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১১টি ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে। ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এমনকি শিল্প ও সেবা খাতের অবদানের ক্ষেত্রেও কৃষির পরোক্ষ অবদান রয়েছে। কৃষি খাত খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পুষ্টি সমস্যা সমাধান, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এমন বাস্তবতায় কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে প্রতিবছর নীতিমালার আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করছে কিনা এবং বিতরণ করা ঋণ যথাসময়ে ফেরত আসছে কিনা সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিত তদারকি করা হয়। তার পরও কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে কৃষি খাতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বর শেষে কৃষি খাতে ঋণ স্থিতি ছিল ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৫৫৮ কোটি।

খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রয়েছে প্রায় ৩ হাজর ৮০৪ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে এর পরিমাণ ৫৩২ কোটি বা ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত জানুয়ারি শেষে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৯৯৩ কোটি টাকা। ফলে এক মাসেই ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৫৫১ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে খাতটিতে ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তার আগের মাসে ডিসেম্বরে ৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ২১৮ কোটি টাকা। এর আগে নভেস্বর মাসে বিতরণ হয়েছিল ৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে ডিসেম্বর এই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছিল ২৭৩ কোটি টাকা। এ নিয়ে পর পর দুই মাস কমল কৃষি ঋণ বিতরণ। যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত (জানুযারি-জুন) মাসের হিসাবে কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে। এ সময়ে ২১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বা ৬০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭ হাজার ৫৫১ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে। যার পরিমাণ পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যা তাদের পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

ফসলের মৌসুমের ভিত্তিতে সারাবছর সমান হারে কৃষি ঋণ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এর পরেও কয়েকটি ব্যাংক ঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১১টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশেও কম ঋণ বিতরণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করতে হয়। কোনো ব্যাংক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে ওই ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়। অপরদিকে কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হয়েছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষি ঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণের ২০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা আদায় করেছে ব্যাংকগুলো। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।