কৃষক-শ্রমিকদের উন্নয়নের মাধ্যমেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব: রাজশাহীতে মেনন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও এমপি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বিগত কয়েক বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের পেছনে অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে আমাদের দেশের কৃষক-শ্রমিকের। অথচ এই কৃষক-শ্রমিকেরই জীবনমানের উন্নয়ন হয়নি। নিশ্চিত হয়নি তাদের অধিকার। বিদ্যমান ভোগবাদী সমাজব্যবস্থা কৃষক-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। কৃষক-শ্রমিকদের উন্নয়নের মাধ্যমেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, দেশে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অর্থনৈতিক লুটপাট বন্ধ করা, নারী ও শিশু ধর্ষণ ও সহিংসতা প্রতিরোধ, মাদকাসক্তি নিরোধ এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গি প্রতিরোধসহ সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আজ শনিবার (২৯.০২.২০) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে বিভাগীয় জনসভা করে ওয়ার্কার্স পার্টি। জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের অনেক কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশের গুটিকয়েক মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। অথচ দেশে এখনও এমন দরিদ্র মানুষ আছে যাদের মাথাপিছু আয় গড়ে এক ডলারেরও কম। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭৮৭ মেগাওয়াট। কিন্তু দেশে ক্রমাগত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর ফলে দরিদ্র মানুষদের জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে এই নেতা বলেন, দেশে ব্যাংক লুটের ঘটনা ঘটছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নজরে পড়ে না। শিক্ষিত যুবকেরা কর্মসংস্থানের অভাবে চাকরি পাচ্ছে না। তাদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। অথচ স্বজনপ্রীতি কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অযোগ্যরা চাকরি পাচ্ছে। দলের নাম ব্যবহার করে অনেকেই অপরাধ করে যাচ্ছে। দেশে খুন, ধর্ষণ, সহিংসতা বেড়ে গেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল চেতনায় বিশ্বাসী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান চালিয়েছিলেন তার ফলাফল কি? আমরা ক্যাসিনো দুর্নীতি, পাপিয়া দুর্নীতি দেখেছি। এসব দুর্নীতির ভার রাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারে না। কারণ ব্যক্তির একার পক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করা সম্ভব নয়। কেবল বড় বড় বিল্ডিং আর পাকা রাস্তাঘাট হলেই দেশের উন্নয়ন হয় না। দেশের প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন ধনী-দরিদ্র কোনো বৈষম্য থাকবে না।

ভারতে চলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে। এতে অনেক নীরিহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় ভারতে সাম্প্রদায়িকতা এখনও বিদ্যমান। এ মুহূর্তে ভারতে অসাম্প্রদায়িক নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। না হলে ভারত-বাংলাদেশ কীভাবে পরস্পর সম্প্রীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে? আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আমরা সর্বোপরী জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যেতে চাই। এই আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সর্বদা সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান তিনি।

রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুর সভাপতিত্বে ও রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবুর সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পলিটব্যুরো সদস্য মাহমুদুল হাসান মানিক, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ (এমপি), কামরুল হাসান প্রমুখ।

এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা বক্তৃতা করেন।