কিম পরিবার উৎখাতে বিদেশে সরকার গঠন বিদ্রোহীদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম পরিবারকে উৎখাত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটির একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। একনায়কের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার লড়াই এগিয়ে নিতে এরই মধ্যে বিদেশে ‘প্রবাসী সরকার’ গঠন করেছে গোষ্ঠীটি।

উত্তর কোরিয়ার বর্তমান নেতা কিম জং উনের সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে চালাচ্ছে জোর প্রচারণা। শুধু তাই নয়, সরকারের বিরুদ্ধে শুরু করেছে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। বিদেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসগুলোতে চালাচ্ছে অভিযান।

হাতিয়ে নিচ্ছে কর্মকর্তাদের নানা গোপন নথি এবং সেগুলো লিফলেট ও পেন ড্রাইভে করে দেশে জনগণের মধ্যে প্রচার করছে। গোষ্ঠীটি নিজেদেরকে চেওলিমা সিভিল ডিফেন্স (সিসিডি) বলে পরিচয় দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এসব জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

চলতি বছরের ১ মার্চ প্রবাসী সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়ে একটি বিবৃতিতে প্রকাশ করে গোষ্ঠীটি। বিবৃতিতে কিম জং উনের সরকারের ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ এনে উৎখাতের ডাক দেয় তারা।

বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলেছে, ‘মানবাধিকার ও মানবতাবাদের নীতির ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ জাতি গঠনের ভিত্তি নির্মাণ করছি আমরা। খাদ্য সরবরাহের সক্ষমতা সত্ত্বেও সরকার লাখ লাখ মানুষকে না খাইয়ে মারছে। জনগণের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি করা হচ্ছে, খুম-গুম-হত্যা চালানো হচ্ছে। এসব কারণে বর্তমান সরকারকে আমরা অনৈতিক ও অবৈধ মনে করছি।’ বিবৃতিতে ‘নিউ জোসিওন’ তথা নতুন কোরিয়া গঠন করতে প্রবাসী কোরীয়দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

তবে কোন দেশে সরকার গঠন করা হয়েছে বিবৃতিতে তার উল্লেখ না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে বসেই কর্মকাণ্ড চালানোর ইঙ্গিত মিলেছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় কিম পরিবারের গত সাত দশকের শাসনামলে সিসিডিই প্রথম কোনো সুসংগঠিত সরকার বিরোধী সংগঠন।

নতুন এ গোষ্ঠীটির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে তা সম্প্রতি দেয়া তাদের কিছু বক্তব্য ও বিবৃতির ভিত্তিতে। বিবৃতিতে কখনও কখনও নিজেদেরকে ‘ফ্রি জোসিওন’ বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। কোরিয়ার রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যা কোরীয়রা বর্তমানে পুরো উপদ্বীপকে বোঝাতে বলে থাকে।

সম্প্রতি স্পেনের একটি আদালতের নথিতে এদের কর্মকাণ্ড উঠে এসেছে। আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাদ্রিদে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে দুঃসাহসী অভিযান চালায় গোষ্ঠীটির বেশ কয়েকজন সদস্য। অভিযানের প্রায় এক মাস এ বুধবার এক বিবৃতিতে সে কথা স্বীকার করেছে সিসিডি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকেই গোষ্ঠীটি প্রথমবারের মতো কোরীয় জনগণের মধ্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়।

ওই মাসেই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে হত্যা করা হয় কিমের সৎ ভাই কিম জং ন্যামকে। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের মতো সুরক্ষিত এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে এতে পিয়ংইয়ংয়ের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এ সময় সিসিডি দাবি করে, কিম জং ন্যামের ছেলে তাদের সুরক্ষায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, গোষ্ঠীটির প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোরীয় বংশোদ্ভূত মেক্সিকোর নাগরিক আদ্রিয়ান হং চ্যাং।

স্পেনের আদালতের নথিতেও তার নাম এসেছে। গত মাসের মাদ্রিদে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে অভিযানের সময় ১০-১২ জনের একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতিয়ে নিতে এই অভিযান চালানো হয়। স্প্যানিশ বিচারক জোস দে লা মাতা জানিয়েছেন, হাতিয়ে নেয়া তথ্যগুলো পাচার করতে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল গোষ্ঠীটি।