কারাগারের ছিঁচকে চোরও হয়ে যাচ্ছে ডাকাত

ডাকাতি মামলার আসামি মনির বেপারী (৪৬) ও হাসান মুন্সি। গ্রেপ্তারের পর জেলও খেটেছেন কয়েকবার। জেলে তাঁরা ছিঁচকে চোরদের সংগঠিত করে ডাকাতি করতে উদ্বুদ্ধ করেন। পরে ওই চোররা জামিনে বের হয়ে যোগ দেয় ডাকাতদলে।

সম্প্রতি ডাকাতদলের বিষয়ে তদন্তে নেমে এসব তথ্য পেয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা। মাদারীপুর জেলা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে একই চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। আদালতের নির্দেশে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে পাঁচজন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে ডাকাতির চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ডাকাতদলের নেতা মনির বেপারী ও হাসান মুন্সির সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মিজান বেপারী, সামাদ সরদার, মিন্টু চৌকিদার, কবির হাওলাদার, হালিম হাওলাদার, সুমন, সজিব, সজল খলিফা, এমারত ফকির, সোহেল জমাদ্দার ও মনু ফকিরকে। এদের মধ্যে সুমন, মিন্টু, সামাদ, হাসান ও মনির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা সাম্প্রতিক সময়ে চারটি ডাকাতির ঘটনার কথা স্বীকার করেছে বলে জানায় ডিবি সূত্র।

ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে সম্মিলিতভাবে ডাকাতদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করা হয়। পলাতকদের ধরতে এখনো অভিযান চলছে।

ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি, তেজগাঁও) শাহাদাত হোসেন সুমা জানান, প্রথমে ঢাকা ও মাদারীপুর জেলার ডাকাতির ঘটনায় তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের একটি গ্রুপ ফেরিওয়ালা সেজে বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ে। নদীর পার এলাকার বাড়িতে যাওয়ার পর বাড়িতে কতজন লোক  থাকে, কী পরিমাণ টাকা-পয়সা পাওয়া যেতে পারে—এমন ধারণা নিয়ে সরদারদের কাছে ফিরে আসে। প্রবাসীদের পরিবার তাদের টার্গেট হওয়ার কারণ—এসব বাড়িতে গয়না ও নগদ টাকা বেশি থাকে বলে তাদের ধারণা। দ্বিতীয় গ্রুপ সরাসরি টার্গেট করা বাড়িতে হানা দেয়। তৃতীয় গ্রুপ তাদের ব্যাক আপ হিসেবে ট্রলারে অবস্থান করে। দ্বিতীয় গ্রুপ বিপদে পড়লে তৃতীয় গ্রুপ তাদের সহায়তা করে। দ্বিতীয় গ্রুপ শক্ত গাছের গুঁড়ি দিয়ে টার্গেট করা বাড়ির দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে সবাইকে জিম্মি করে লুটপাট চালায়। জিম্মি করতে তারা দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে।

এডিসি সুমা আরো জানান, টাকা ভাগাভাগির জন্য ডাকাতদের একটি নিয়ম রয়েছে। রেকি করা গ্রুপকে লুট করা সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ দেওয়া হয়। টাকা দেওয়া হয় অপারেশনে যুক্ত থাকা বাকি সদস্যদের। সরদারের ভাগে থাকে টাকাসহ সোনার গয়না ও মূল্যবান জিনিসপত্র। ডাকাতির মালপত্র কেনার জন্যও একটি গ্রুপ রয়েছে। তারা কম দামে মালপত্র কিনে নেয়। ডাকাতি করা সোনার গয়নাগুলো গলিয়ে তা বাজারে বিক্রি করা হয়।

মাদারীপুরের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, প্রতিটি ঘটনায় একই প্রক্রিয়ায় ডাকাতি করা হয়। ডাকাতির সময় সবার মুখে মাস্ক ও মুখোশ ছিল। প্রতিটি ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে দেশি অস্ত্র ও গাছের গুঁড়ি। পরে ঢাকার ডিবির সঙ্গে কাজ করে চক্রটিকে শনাক্ত করে জেলা পুলিশ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ