ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে রোগীরা

কাজে যোগ দিবেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা : রাবির ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সব ওয়ার্ডের সাধারণ রোগীরা। এই পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনে সব ধরণের চেষ্টা চালাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর এবং ভাঙচুরের অভিযোগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলার এজাহার দাখিল করেছে। এজাহারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অজ্ঞাতনামা ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

আরএমপির রাজপাড়া জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. সোহেল রানা অভিযোগের এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সেটা এখনো মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। পর্যালোচনা চলছে। দ্রুতই এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।’

অপরদিকে, শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের একজন শিক্ষক বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন হাসপাতাল পরিচালক। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর অফিসকক্ষে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বৈঠকে মামলার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক চলাকালেই হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন রাজপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসেন।

সভায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, রাবি প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ অন্যান্য চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী  বলেন, হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদেও মারধরের কারণে হাসপালাতালের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে লিখিত অভিযোগ থানায় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বৈঠকের পর ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তাঁরা কাজে যোগ দেবেন। জরুরি ওয়ার্ডগুলোতে এরই মধ্যে চিকিৎসকেরা যোগ দিয়েছেন।

পরিচালক বলেন, ২৯০ জন ইন্টার্নি চিকিৎসক ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনা অসম্ভব। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ৩ হাজার রোগী ভীতিকর পরি¯ি’তির মধ্য দিয়ে সময় পার করেছে। ইমারজেন্সি অনেকগুলো অপারেশন না করেই চিকিৎসকরা ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে।

রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন বলেন, জরুরি ওয়ার্ডগুলোতে এরই মধ্যে চিকিৎসকেরা যোগ দিয়েছেন। বাকি ওয়ার্ডগুলোতে আগামীকাল শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে তাঁরা কাজে যোগ দেবেন।’ এছাড়া আগামী তিন দিন এক ঘন্টা করে তারা কর্মবিরতি পালন করবে। তাঁরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার চান। এই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার না হলে আগামী শনিবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করবেন। এরপর আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেয় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এর পর থেকেই সবাই একযোগে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এর আগে রাত ১১টার দিকে কর্মবিরতি করে হাসপাতালের সামনে অব¯’ান নেয় তারা। রাতে ডাক্তাররা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সামনে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন রামেকহার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরাম হোসেন।

উল্লেখ্য, বুধবার রাত ৮টার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের চারতলার বারান্দা থেকে পড়ে আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রাত ৯টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাবি শিক্ষার্থীদের দাবী, প্রায় ১ঘন্টা হাসপাতালে থাকলেও শাহরিয়ারকে কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এরপর চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়ে দুই চিকিৎসককে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় হাসপাতালের আনসার সদস্য ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে রাবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৫ রাবি শিক্ষার্থী আহত হন।

এস/আই