কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলেন রাজশাহীর বোরহান

নিজস্ব প্রতিবেদক:


কথায় আছে- বিষে বিষক ক্ষয়। এই বিষ দিয়ে বিষ ক্ষয়ের পথে হাঁটছেন বোরহান বিশ্বাস রোমন। তার এমন পরিকল্পনা অনেকটাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো। সংশ্লিষ্টরা জানায়- সাপের কামড়ে আর একজন মানুষও না মারা যায়। সেই লক্ষ্যে এন্টিভেনাম তৈরির জন্য কাজ করছেন তারা।



রাজশাহীর পবা উপজেলার ধর্মহাটা গ্রামে। বোরহানে ‘সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র’। এখানে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করছেন কয়েকজনকে নিয়ে । এটি গ্রাম এলাকায় হওয়ার পরেও স্থানীয়রা হরহামেশায় চলাচল করছেন। তারা জানান- এখানকার সাপ কোন দিন কারো ক্ষতি করেনি।

বোরহান বিশ্বাস রোমন জানান- প্রায় এক যুগ ধরে সাপের সঙ্গে রোমনের এমন বন্ধুত্ব। রোমন আহত সাপ উদ্ধার করে চিকিৎসা দেন। তারপর প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেন। এ জন্য একটা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র’। এটি রাজশাহীর পবা উপজেলার ধর্মহাটা গ্রামে।  ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এখানে রয়েছে লেজার ব্ল্যাক রেইট, রাসেল ভাইপারসহ কয়েক প্রজাতির বিষধর সাপ। দুটি মৃত সাপকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে গবেষণার জন্য। বিরল রেড কোরাল কুকরি সাপটির জখমের স্থানে অনেকগুলো সেলাই দেয়া হয়েছে।

রোমন জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রকল্পে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভেনম রিসার্চ ইনস্টিটিউট করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন কর্মকর্তা যিনি জার্মানির একজন শিক্ষক তিনি তার সম্পর্কে জানতেন। তিনিই রোমনকে ভেনম রিসার্চ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষক হিসেবে নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাকরি করতে রাজি হননি। তবে চুক্তিভিত্তিক তিনি কাজ করতে আগ্রহী হন। সেভাবেই সেখানে কাজ করছেন।

পুলিশের জরুরি সেবা কেন্দ্রে তার মোবাইল নম্বরটি রাখা হয়েছে। কোথাও সাপ নিয়ে কেউ বিড়ম্বনায় পড়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে রোমেনের নম্বর দেয়া হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে এত বেশি পরিমাণ কল আসে যে রোমন সবখানে যেতে পারেন না। তাই দেশের সবজেলায় অন্তত একজন করে তার কর্মী তৈরির কাজ শুরু করেছেন রোমন।

তিনি বলেন, ‘সাপ ধরতে হলে যেমন সাহসের প্রয়োজন তেমনি সাপের প্রতি অগাধ ভালবাসাও থাকতে হবে। সে রকম লোক খুঁজে পাওয়া আসলেই কঠিন। তারপরও আমি অন্তত ১৫ জেলায় ১৫ জনকে তৈরি করতে পেরেছি। রাজশাহী ও চট্টগ্রামে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমি চাই দেশের সব জায়গায় এমন কর্মী তৈরি হবে। আমার স্বপ্ন- দেশের একজন মানুষও সাপের কামড়ে মারা যাবে না। মানুষও একটা সাপকে পিটিয়ে হত্যা করবে না।’

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বোরহান বিশ্বাস রোমন আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তাকে আমরা আমাদের কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে ডাকি। তার কাছ থেকে আমরা নানা পরামর্শ নিয়ে থাকি। কারণ, এখনও পর্যন্ত রাজশাহীতে আমাদের একজনও সাপ ধরার এক্সপার্ট নেই।

স/আ