কলেজ ছাত্রের আত্মহত্যা, জড়িতদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:

ছুটে যাওয়া গরু ফেরত না দেয়ার অভিমানে সঞ্জিত কুমার রনজিত (১৭) নামে এক কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যা করার ঘটনা জড়িত, মামলা ভিন্নখাতে নেয়ার অভিযোগ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মান্দায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপূরে উপজেলার বাঁকাপুর গ্রামে এই কর্মসূচী পালন করা হয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপজেলা শাখা এর আয়োজন করে।

 

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা. এসএম ফজলুর রহমান। এতে আরো বক্তব্য রাখেন, উপজেলা কমিটির সভাপতি রতন প্রসাদ ফনি, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান, সদস্য হাফিজ উদ্দিন, ওসমান গণি, ওহিদুর রহমান, আলাউদ্দিন প্রমূখ। এতে এলাকাবাসিসহ গ্রামবাসি অংশ গ্রহণ করেন।

 
বক্তরা জানান, সঞ্জিত কুমারকে অাত্মহত্যা করার পর পুলিশের সাথে মতিউরের লোকজনের দফায় দফায় বৈঠক শেষে মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে নিহতের ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘরি করে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। আত্মহত্যার প্ররোচনাকারি মতিউর রহমানকে (৩২) আটক করার পরও এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার দেখায়নি পুলিশ। পরে পুলিশ মতিউরকে মদপানের অভিযোগে শুক্রবার ভ্রাম্যমান আদালতের মধ্যেমে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছে। এ ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে ৬দিনেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্ত স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মদদে মতিউর রহমানের লোকজন নিহতের অসহায় পরিবারদের উপর বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এর ফলে নিহতের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এখন তারা আইন-আদালতের পরিবর্তে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দাবি করছেন।

 
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাঁকাপুর গ্রামে কানাইলাল সরকার ৯/১০ বছর আগে মারা যান। তার মৃত্যুর পর থেকে ছেলে সঞ্জিতকে লেখা-পড়া শিখিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন এমন মনোবাসনায় মা জ্যোৎনা রাণী মানুষের বাড়ি কাজ করে টাকা আয় করতেন।

 

এমতাবস্থায় গত সোমবার সন্ধ্যায় সঞ্জিতের বাড়ির গোয়াল থেকে একটি ষাড় গরু ছুটে যায়। রাতে অনেক খোঁজাখুজি করে পাননি তাদের পরিবার। পরদিন মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে রনজিত জানতে পারেন, একই গ্রামের মুনছুর আলীর ছেলে মতিউর রহমান তার বাড়িতে গরুটি আটকে রেখেছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মতিউরের বাড়ি গিয়ে গরুটি চিনতে পারায় ফেরত চান। এমন দাবিতে সাড়া না দিয়ে গরুটি নিজের বলে দাবি করেন মতিউর। এমতাবস্থায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় গরুটি উদ্ধার করতে না পারায় রনজিত তার নিজ বাড়িতে এসে ঘরের মধ্যে যান। রনজিত দীর্ঘ সময় ঘরের মধ্যে থেকে বের হওয়ায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ দেখা দিলে তারা দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ সময় আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করা রনজিতের লিখা একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়। মৃত্যু আগে রনজিত তার চিঠিতে লিখে গেছেন “হারানো গরু পাওয়ার পরও ফেরত না দেয়ায় কষ্ট সহ্য না করতে পেরেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন”।

 

এ ঘটনায় নিহতের জ্যাঠা (বড় বাবা) করুণা কান্ত সরকার বাদি হয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করলে মতিউর রহমানকে আটক করে পুলিশ। এরপর মোটা অংকের উৎকোচের মধ্যেমে থানা পুলিশ আটককৃত মতিউর রহমানকে মদ্যপানের অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করে।

 

মতিউর রহমান জানান, গরুটি তার আখ ক্ষেতে আসায় বাড়ীতে আটকে রেখেছিলেন। পর দিন দুপূরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অপরপ্রশ্নে মতিউর জানান, সেদিন কোন মাদক না পান করলেও পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তারপরও পুলিশ তাকে ভ্রাম্যমান আদালতের মধ্যে জরিমানা আদায় করা হয়।

 

পুলিশের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে জানান, এ ব্যাপারে নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে যদি মামলা দায়ের করে তাহলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

 

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রশিদুল হক জানান, ঘটনাটি শোনারপরও পূজা নিয়ে ব্যবস্থ থাকায় বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স/অ