করোনা মোকাবেলায় যেসব দেশ সফল তাদের অনুসরণ করা উচিত

আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে, যাদের কাজই হচ্ছে চা-সিগারেট-পান-বিড়ি খাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হবে। এরপর কয়েকজন সারিবদ্ধ কিংবা গোল হয়ে বসে দিন দুনিয়ার গল্প করবে। এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় গল্পের বিষয় হচ্ছে করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা করা।

একটা ছোট্ট চা-বিস্কুটের দোকানে কয়েকজন বসে থাকা মানুষের গল্পের কথা বলছি। একজনের এক হাতে চায়ের ছোট গ্লাস আর অন্য হাতে ডার্বি সিগারেট। তিনি পণ্ডিতের মত বলতে লাগলেন, আমেরিকার মত দেশ তারাই ভাইরাস কন্ট্রোল করতে পারে নাই। এটা কন্ট্রোল করা কি এতই সহজ?

পাশে বসা অন্যজন এককাঠি সরেস। তিনি যোগ করলেন, ইউরোপের অবস্থা দেখছ? কত উন্নত দেশ। তারাও মইরা শেষ। আরেকজন, ইরানের তো অ্যাটম বোম আছে। ওখানে অনেক মানুষ মারা গেছে। ওরাও শেষ।

চায়ের দোকানদারের মনে হয় এসব কথা ভালো লাগছিল না। বেশি লোকজন জড় হলে দোকান বন্ধ করা লাগতে পারে। তাই তিনি বললেন, তোমাদের কি মরার ভয় নাই? তাড়াতাড়ি চা খেয়ে বাসায় যাও।

আমাদের দেশের অনেকের মধ্যেই এই ধারণাটা কাজ করছে। উন্নত দেশেও যেহেতু লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশেও হবে। অনেক দেশের রাজা-রানী-রাজপুত্র-মন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন, সেখানে আমরা তো সাধারণ মানুষ।

আমাদের উন্নত দেশের চিন্তা করে লাভ নেই। কারণ যে উন্নত দেশগুলোতে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, শুরুর দিকে তারাও কিন্তু এই ভাইরাস নিয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তাদের অবস্থা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

যে দেশগুলো শুরু থেকেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের দিকে গুরুত্ব দিয়েছে, আমাদের উচিত সেই দেশগুলোকে উদাহরণ হিসেবে দেখা। ভুটান, নেপালের কথা চিন্তা করুন। যাদের সঙ্গে গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে আমরা প্রতিযোগিতা করি, আমাদের উচিত সেই ভিয়েতনামকে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করা।

চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। কিন্তু সেখান থেকে বেইজিং কিংবা সাংহাইয়ে কিন্তু করোনাভাইরাস ঢুকতে পারেনি।

ধরুন, একটি ক্লাসে ২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এখন আপনি যদি ক্লাসের ফার্স্ট কিংবা সেকেন্ড রোলধারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে তুলনা করে পড়ালেখা করেন, তাহলে আপনার অবস্থান অবশ্যই উপরে চলে যাবে। হয়তো পরবর্তীতে আপনি ফাস্ট কিংবা সেকেন্ড হয়ে যেতে পারেন।

কিন্তু আপনি যদি ক্লাসের ১৯ কিংবা ২০ নম্বর অবস্থানের শিক্ষার্থীর (হয়তো তাদের অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে) সঙ্গে তুলনা করে পড়ালেখা করেন, তাহলে আপনার অবস্থান রেজাল্টের দিক থেকে নিচের দিকেই গিয়ে ঠেকবে।

তুলনা যদি করতেই হয়, যারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সফল, তাদের সঙ্গে করা উচিত। যেভাবে তারা সফল হয়েছে, আমাদেরও সেই পথ অনুসরণ করা উচিত। কারণ করোনাভাইরাস পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ কিংবা সৈন্যবিহীন দেশ, উন্নত কিংবা অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে কোনো বৈষম্য করেনি।

লেখক: রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

 

 

সুত্রঃ যুগান্তর