করোনা : টপাটপ ঝরে পড়ছেন ভ্যাকসিনবিরোধী যাজক-পুরোহিতরা

গ্রিসের অর্থোডক্স খ্রিস্টান সম্প্রদায়ে বেশ জোরেশোরেই আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস। টিকা নেননি এমন যাজকগণ একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এ ঘটনা কিছু পুরোহিত ও সন্ন্যাসীদের টিকা নেওয়ার বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

গত মাসে পূর্বাঞ্চলীয় অর্থোডক্স কমিউনিটির অন্যতম কেন্দ্র মাউন্ট অ্যাথোসে (যা বর্তমানে করোনার হটবেড হিসেবে পরিচিত) চারজন পুরোহিত করোনাভাইরাসে মারা যান। তাঁদের কেউই টিকা নেননি। বিষয়টি যাজকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। গত সপ্তাহে পারতা শহরের একজন যাজক এবং দিসালোনিকির একজন ৪৬ বছর বয়সী আর্কিমান্দ্রিত (সন্ন্যাসী পুরোহিতদের দেওয়া একটি সম্মানসূচক উপাধি) মারা যান করোনাভাইরাসে। তাঁদের কেউই ভ্যাকসিনেটেড ছিলেন না।

তাদের মৃত্যুর পর গ্রিক মিডিয়া জানায়, মাউন্ট অ্যাথোসের করোনায় মৃত একজন সন্ন্যাসী টিকা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু তার প্রবীণ গাইড তাকে টিকা নিতে নিষেধ করেন। গ্রিক অর্থোডক্স চার্চে এটি অস্বাভাবিক নয়। গত দুই বছরে বিপুলসংখ্যক পুরোহিত প্রকাশ্যে ও গোপনে লকডাউন, কারফিউ, মাস্ক এবং এখন ভ্যাকসিনসহ মহামারি প্রতিরোধব্যবস্থার বিরোধিতা করছেন।

মাউন্ট অ্যাথোসের পবিত্র এসফিগমেনৌ মঠের মঠাধ্যক্ষ আর্কিমান্দ্রিত বার্থোলোমেউ গত ১৫ নভেম্বর ফেসবুকে লেখেন, যারা ভ্যাকসিন সম্পর্কে ভয় ও মিথ্যা ছড়ায়, তাদের মধ্যে যারা ক্যাসক (যাজকদের লম্বা, আঁটসাঁট পোশাক) পরে তারা সংখ্যালঘু। কিন্তু তারাই জনস্বাস্থ্য ও মানুষের মানসিক অবস্থার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। আমরা পরিস্থিতির ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ অবস্থান করছি। যারা মহামারি সম্পর্কে মিথ্যা ছড়ায়- তারা ক্ষমতা ও খ্যাতি খোঁজে। তারা কিছু শ্রোতা ও অনুগামী অর্জন করে। তারা মানুষের মধ্যে সঠিক গুণাবলী গড়ে তোলে না। তারা মানুষের ভয় ও আবেগের সুযোগ নেয়।

পোস্টে আরো লেখা হয়, গত কয়েক মাসের মধ্যে পুরোহিতদের টিকা গ্রহণের সংখ্যায় একটি নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাদের মধ্যে কভিড প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণে কিছু মৃত্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ক্রেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক নিকোস জানাকিস এর তথ্যানুসারে, মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ যাজক সেপ্টেম্বর মাসে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ডেইলি বিস্টকে তিনি বলেন, সত্য হলো তাঁদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কেউ কেউ মারা যান। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন দ্বারা তাদের ‘আটকে রাখার হুমকি দেওয়ার’ ব্যবস্থা নেওয়া নিশ্চিতভাবে একটি শক্তিশালী উদ্যোগ। গ্রিসজুড়ে আনুমানিক ৭০ শতাংশ পুরোহিতকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ