করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে দুই দিনের বেশি রোগী রাখেন না স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

করোনাভাইরাস সংক্রামণ আতঙ্কে বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই দিনের বেশি সময় কোন রোগীকে ভর্তি রাখছেন না স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ডাক্তাররা। এছাড়া জরুরি কোন রোগী আসলেই তাকে রেফার্ড করা হচ্ছে জেলা সদরের অন্য হাসপাতালে। সরকারি এই হাসপাতালের এমন চিত্র প্রায় নিত্যদিনের। এ কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, ধুনট উপজেলার প্রায় ৫ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও মাত্র ১০ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ডাক্তারই কর্মস্থলে থাকেন না। কিছু ডাক্তার কর্মস্থলে থাকলেও তারা বে-সরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখতেই বেশি সময় ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২টি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও ডাক্তার ও জনবলের অভাবে দীর্ঘদিন যাবত অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার যত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এক্সরে মেশিনটি একদিনের জন্যও চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ইসিজি মেশিন ও আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও জনবলের অভাবে মেশিনগুলো দীর্ঘদিন যাবত বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে কোন জরুরি রোগীকে এখানে ভর্তি করানো হয় না। জরুরি রোগী আসলেই তাকে রেফার্ড করে বগুড়ায় পাঠানো হয়। আর এভাবেই চলছে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা।

এরমধ্যে আবার করোনাভাইরাস সংক্রামণের ঝুঁকির অজুহাত ডাক্তারদের। তাই যে কোন রোগীকে দুই দিনের বেশি সময় হাসপাতালে ভর্তি না রাখতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে দিয়েছেন ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হাসানুল হাছিব।

গত বুধবার (২৬ আগস্ট) প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত এক শিক্ষককে দুই দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার নাজেহাল অবস্থার করুণ চিত্র আবারও ফুটে উঠেছে। শনিবার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে আহত সেই শিক্ষকের বাবা শাজাহান আলী বলেন, হামলায় আমার ছেলের মাথা ফেটে গিয়েছিল। ৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার মাথা ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে এখনও ব্যথা রয়েছে। কিন্তু ধুনট হাসপাতালের ডাক্তার আমার ছেলেকে সুস্থ না করে দুই দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়েছে। তারা বলেছেন, করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় আমার ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে। আমরা দরিদ্র মানুষ। তাই ডাক্তাররা আমার ছেলেকে চিকিৎসা না দিয়েই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: মিলটন সরদার বলেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে রোগীদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হাসানুল হাছিব বলেন, হাসপাতালে বিভিন্ন রোগী আসে। তাই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে যদি কেউ বাড়ি চলে যেতে যায় তাহলে তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত জানান, ধুনট হাসপাতালের অনেক ডাক্তারই দুপুর ১টার আগেই চলে যান। এ বিষয়ে নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে একাধিকবার অবগত করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। তাই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জনসহ ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন