করোনায় ৫ গুণ বেশি মৃত্যু: ডব্লিউএইচও’র সঙ্গে একমত নন সংশ্লিষ্টরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ 

বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে চলতি বছরের ৭ মে পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১২৭ জনের। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমানে এ সংখ্যাটা আরও পাঁচগুণ বেশি দেখানো হয়েছে। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন এক লাখ ৪১ হাজার জন। তবে ডব্লিউএইচও তাদের পরিসংখ্যানে করোনাভাইরাসে সরাসরি মৃত্যু ছাড়াও করোনার কারণে পরোক্ষভাবে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছে। মৃত্যুর এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নন দেশের স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা।

ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, যা বর্তমান সরকারি পরিসংখ্যানের দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী ৫৪ লাখ মৃত্যুর কথা জানা যায়।

 ডব্লিউএইচও’র মৃত্যুর হিসাব গণনার পদ্ধতি ঠিক আছে। তবে কোন তথ্যের ভিত্তিতে তারা পরিসংখ্যান তৈরি করেছে, সেই তথ্যের উৎস জানতে হবে। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিলিয়ে একই রকমভাবে তুলে ধরলে সেটা ঠিক হবে না।

এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লকডাউন ও বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বা পেশাগত আঘাতের মতো নির্দিষ্ট কিছু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম ছিল। এ কারণে মহামারি চলাকালীন মৃত্যুর আনুমানিক সংখ্যা প্রভাবিত হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়।

ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মৃত্যু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় ঘটেছে। এতে বলা হয়, ভারতে করোনায় ৪৭ লাখ মৃত্যু হয়েছে, যা দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানের ১০ গুণ বেশি। এটি বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। যদিও ভারত এই হিসাবকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভুল তথ্য বলে এড়িয়ে গেছে।

jagonews24

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডব্লিউএইচও’র মৃত্যুর হিসাব গণনার পদ্ধতি ঠিক আছে। তবে কোন তথ্যের ভিত্তিতে তারা পরিসংখ্যান তৈরি করেছে, সেই তথ্যের উৎস জানতে হবে। ডব্লিউএইচও মৃত্যুর যে সংখ্যাটা দিয়েছে তা তারা কীসের ভিত্তিতে দিয়েছে সেটা স্পষ্ট নয়। এই গবেষণার পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক হতে পারে কিন্তু সেই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা তথ্য কতটা সঠিক সে বিষয়টা দেখার আছে। পার্শ্ববর্তী অন্য দেশের তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিলিয়ে একই রকমভাবে তুলে ধরলে সেটা ঠিক হবে না।

 ডব্লিউএইচও’র তথ্যের সঙ্গে একমত নন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে সরকার পরে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকারের কাছে নেই বলেও জানান মন্ত্রী।

এদিকে, কোভিডে মৃত্যু নিয়ে সরকারের দেওয়া তথ্য সঠিক বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। ফলে করোনাভাইরাসে মৃত্যু সংক্রান্ত ডব্লিউএইচও’র দেওয়া তথ্যের সঙ্গে একমত নন তিনি। এ বিষয়ে সরকার পরে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেবে বলেও জানান মন্ত্রী। এছাড়া প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকারের কাছে নেই বলেও জানান তিনি।

ডব্লিউএইচও বলছে, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল এ বিষয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করেছে। তারা সরকারিভাবে দেওয়া তথ্য ও স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেছে।

সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে বিশেষ করে ২০২০ সালের জুন-জুলাই-আগস্ট সময়ের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রথমবার বাড়ে। ডব্লিউএইচও অনুমান করেছে, ওই সময়ে সাধারণ পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত মৃত্যুর চেয়ে অতিরিক্ত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।

এতে আরও বলা হয়, মহামারির প্রথম বছর (২০২১ সাল) শেষে বাংলাদেশে অতিরিক্ত মৃত্যু হয় ৪৬ হাজার ৪১ জনের। দ্বিতীয় বছরের (২০২২ সালের) এপ্রিলে ১৪ হাজার ২৭৬ জন, জুনে ১৩ হাজার ১৩ জন, জুলাইয়ে ২০ হাজার ৩০ জন এবং আগস্টে ১৮ হাজার ৯১৫ জনের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়।

 করোনার প্রভাবে দেশে কতজন মারা গেছেন, এই ধরনের তথ্য সরকারের হাতে নেই। যদি জানা যায়, ২০২০ সালে কতজন মারা গেছেন এবং ২০২১ সালে এসে তা কত, তাহলে একটা হিসাব পাওয়া যেতে পারে।

ডব্লিউএইচও’র হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজার ৭৬৪ জনে পৌঁছেছে।

jagonews24

এসব বিষয়ে ডা. মুশতাক হোসেন জানান, বাংলাদেশে মানুষ মারা গেলে তা সহজেই বের করা যায়। এখানে মৃত্যু হওয়া সবাইকে কবর কিংবা দাহ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে জরিপ করা হলে সহজেই তা বের করা সম্ভব। যদি এই মৃত্যু (ডব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য) হয়ে থাকে তাহলে আমাদের বের করতে হবে আনডিটেকটেড (শনাক্ত হয়নি) কতজন, আর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মহামারির কারণে স্বাস্থ্যসেবা নিতে না পেরে কতজন মারা গেছেন। ভারতে অনেক মরদেহ সৎকার না করতে পেরে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। এরকমটা বাংলাদেশে হয়নি।

তিনি বলেন, কোভিডের সময় অন্যান্য রোগে (করোনা ব্যতীত) আক্রান্ত অনেক মানুষ পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারেননি এটা সত্য। আবার অনেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তবে তা পাঁচগুণ হওয়ার কথা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্ট্যাডিজ করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত দিয়েছিল। তাদের সেই তথ্য থেকে এটি অনেক বেশি।

আইইডিসিআরের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, করোনার প্রভাবে দেশে কতজন মারা গেছেন, এ ধরনের তথ্য সরকারের হাতে নেই। যদি জানা যায়, ২০২০ সালে কতজন মারা গেছেন এবং ২০২১ সালে এসে তা কত, তাহলে একটা হিসাব পাওয়া যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে। তিনমাসের একটি জরিপ করা হলে সঠিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ