করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে অনন্য উদাহরণ ভিয়েতনাম

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের যে গুটিকয় দেশ সফল হয়েছে, তাদের অন্যতম ভিয়েতনাম। প্রাণঘাতী এ মহামারীতে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত, তখন দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩৩০ এবং মৃতের সংখ্যা শূন্য।

অথচ সাড়ে নয় কোটিরও বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভিয়েতনামকে একটি জনবহুল দেশই বলা চলে। ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও দেশটিতে এ পর্যন্ত একজনও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়ে মারা যাননি। খবর বিবিসির।

প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩৩০ জন। মধ্যম আয়ের দেশটি কিভাবে তাদের আক্রান্তের হার এতটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পেরেছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার একদম প্রথম দিকেই ভিয়েতনাম সরকার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তার আগে তারা চীনের সঙ্গে সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয়।

সীমান্ত এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাড়ানো শুরু করে। এসব ব্যবস্থা কার্যকর করতে অন্যান্য দেশ কয়েক মাস পর্যন্ত সময় ব্যয় করেছিল।

মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ভিয়েতনামে যারা বাইরের দেশ থেকে প্রবেশ করেছেন এবং যারা কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দেন।

এই নির্দেশনাগুলো কার্যকর করতে প্রতিটি পর্যায় তারা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।

অন্যান্য দেশের জন্য ভিয়েতনামে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠলেও তাদের সাফল্য থেকে শিখতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

চীনের উহান থেকে ফেরা ৬৬ বছর বয়সী এক ভিয়েতনামি প্রথম করোনাভাইরাসে শনাক্ত হন। আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর প্রকাশ করে ভিয়েতনাম সরকার।

ওই দিন থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘কোভিড-১৯’ রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৪ জনে।

এর মধ্যে দুজন চীনা নাগরিক ছাড়া বাকি সবাই ভিয়েতনামি। ব্যাপক আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তখনই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার।

পাশাপাশি করোনা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। কীভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে, কী করলে সুস্থ থাকবে, এটাই ছিল প্রচারের মূল্য বক্তব্য।

এসবের পাশাপাশি দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে পরীক্ষা করেছে। তবে গত ২ মার্চ সর্বনাশটা ঘটায় দেশটির একজন প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী।

ইউরোপের তিন দেশ ঘুরে ওই ব্যবসায়ী ভিয়েতনামের হ্যানয় বিমানবন্দরের দায়িত্বরত কর্মচারীদের পরীক্ষা ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়েন দেশে।

বিমানবন্দরের পরীক্ষায় ফাঁকি দিলেও ভিয়েতনামের পুলিশ তাকে ঠিকই আটক করে। এর পর জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। এর পর ভিয়েতনাম সরকার একটা বড় পদক্ষেপ নেয়। সেটি হলো– ওই নারী যে বিমানে এসেছিলেন, তার সব যাত্রীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।

তিনি যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই রাস্তা জীবাণুমুক্ত করা হয়, সেই পথের ধারে বাস করা প্রত্যেককে পরীক্ষা করা হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সব রোগীকে সুস্থ করে তোলায় ভিয়েতনামের চিকিৎসকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

হুর কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি বিস্তারের প্রাথমিক পর্যায়েই তা মোকাবেলায় দেশটির সরকারের নেয়া নানা জরুরি পদক্ষেপ বেশ ভালোভাবে কাজ করেছে বলেই এমনটি সম্ভব হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা