কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা ১৬০ কচ্ছপের প্রাণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে একদল যুবক। পাশাপাশি শত শত টন বর্জ্যও সরিয়ে সৈকতকে ময়লা-আর্বজনামুক্ত করছে তারা।
সূত্র মতে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জাল ও বর্জ্যের সঙ্গে আটকে পড়েছিল কচ্ছপসহ বিভিন্ন প্রকারের সামুদ্রিক প্রাণী। এদের মধ্যে বিশেষ করে কচ্ছপ ও সাপ ছিল উল্লেখযোগ্য।
গত শনিবার রাত থেকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ভেসে আসে বর্জ্য ও প্রাণীগুলো। খবর পেয়ে ওই রাতেই প্রাকৃতিক প্রেমে পড়ে জীবিত প্রাণীদের জীবন বাঁচাতে এবং বর্জ্য সরানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন পর্যটন এলাকার হিমছড়িস্থ দরিয়ানগরের কিছু যুবক।
সূত্র আরও জানায়, সেভ দ্য নেচার অফ বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টিম দরিয়ানগরের সমন্বয়ক বড়ছড়া এলাকার যুবলীগ কর্মী পারভেজ মোশারফের নেতৃত্বে করোনার মাঝেও প্রাণীগুলোকে উদ্ধার করে সমুদ্রে অবমুক্তের কাজ শুরু করেন তারা। সেই থেকে বর্জ্য অপসারণ থেকে শুরু করে প্রাণী অবমুক্তকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন পারভেজের নেতৃত্বে দরিয়ানগরের ২০ জনের মতো যুবক।
তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থা। বিপদে পড়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সামুদ্রিক প্রাণীগুলোকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠে এসেছে পারভেজের বিভিন্ন সুনাম।
এই মহতী উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়া পারভেজ মোশারফ বলেন, শনিবার রাত ১০টার দিকে সৈকতে কাছিমসহ নানা সামুদ্রিক প্রাণী আটকেপড়া ও বর্জ্য আসার খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন বন্ধুসহ এলাকার যুবকদের নিয়ে সমুদ্র সৈকতে যাই। সেখানে নানা প্রাণীর আকুতি দেখে আরও লোকজন সংগ্রহ করে উদ্ধার ও বর্জ্য সরানোর কাজ শুরু করি। যা বর্তমানেও চলমান রয়েছে।
পারভেজ জানান, শনিবার থেকে ১৪ জুলাই মঙ্গলবার পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দরিয়ানগর পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত ১৬০টি কচ্ছপকে উদ্ধার করে সমুদ্রে অবমুক্ত করেছি। এই অবমুক্ত করার সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং পরিবেশ প্রেমী লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ২টি বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক সাপও অবমুক্ত করা হয়। মূলত দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ নিয়ে কাজ করার কারণে নিজের বিবেকবোধ থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলে বলে জানান পারভেজ।
কক্সবাজারে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, যে সমস্ত বর্জ্য সৈকতে ভেসে আসছে তা জাহাজ থেকে ফেলানো বর্জ্য হিসেবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় একদল যুবক বর্জ্য অপসারণ ও সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)আশরাফুল আফসার।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, ইতিমধ্যে বর্জ্য অপসারণ ও আটকেপড়া প্রাণীদের অবমুক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে পুনরায় আকর্ষণীয় করে তোলা হবে।