ওমিক্রন বিশ্বের জন্য ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনকে পুরো বিশ্বের জন্য ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ চিকিৎসা কর্মকর্তা অ্যান্টনি ফাউচিও ধরনটিকে বেশি সংক্রামক আখ্যা দিয়ে টিকা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ওমিক্রনের কারণে তাঁর দেশ ও প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার নিন্দা করে তা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল সোমবার বলেছে, ওমিক্রনের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন রয়েছে, যার মধ্যে কিছু বদল উদ্বেগজনক। এটির হয়তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা আছে। পাশাপাশি তুলনামূলকভাবে বেশি সংক্রামকও হতে পারে।

ডাব্লিউএইচও আরো বলেছে, বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা খুব বেশি। এখন পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত কেউ মারা যায়নি বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। তবে তারা সতর্ক করে দিয়ে এও বলেছে, নতুন এই ধরন যদি আগের ধরনের চেয়ে কম ভয়ংকর বলেও প্রমাণিত হয়, এটি সহজেই মানুষকে সংক্রমিত করলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়বে এবং এ কারণেই আরো মৃত্যু হবে। ওমিক্রনের কারণে যদি কভিড-১৯-এর বড় ধরনের উত্থান ঘটে, তবে এর ফল খুব খারাপ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও বলছেন, ওমিক্রন বেশি সংক্রামক। এটি সবার টিকা নেওয়ার জন্য এক স্পষ্ট তাগিদ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ চিকিৎসা পরামর্শক অ্যান্টনি ফাউচি এনবিসি টিভির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ মত দেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর ওই দেশসহ আশপাশের আটটি দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই নিষেধাজ্ঞা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরুতে এই নতুন ধরন শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের লক্ষণগুলো তীব্র নয়।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা তাঁর নিজের ও প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গত রবিবার তিনি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ায় তাঁরা ‘গভীরভাবে হতাশ’। এ ধরনের পদক্ষেপকে তিনি ‘অন্যায়’ বলে বর্ণনা করেন। এই নিষেধাজ্ঞার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই উল্লেখ করে তিনি দ্রুত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। রামাফোসা বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো যাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও দ্রুত এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, দেশগুলোর উচিত ঝুঁকির মাত্রা কতটুকু, তা বিবেচনা করে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া। সংস্থাটির আফ্রিকার পরিচালক মাতসিডিসো মোয়েতি গত রবিবার বলেন, ওমিক্রন এখন বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে। তাই শুধু আফ্রিকাকে লক্ষ্য করে যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা বৈশ্বিক একতার ওপর আঘাত।

লক্ষণ মৃদু

দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ড. অ্যাঞ্জেলিক কোটজি ভারতের এনডিটিভিকে বলেছেন, এ পর্যন্ত ওমিক্রনের লক্ষণগুলো গুরুতর নয়। ক্লান্তি ও শরীর ব্যথা থাকলেও নাক বন্ধ বা উচ্চ মাত্রার জ্বর নেই। তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে তরুণরা ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।

এদিকে নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। গত রবিবার মোট শনাক্তের সংখ্যা ছিল দুুই হাজার ৮০০। গত সপ্তাহে দৈনিক গড় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৫০০। তার আগের সপ্তাহে ছিল ২৭৫।

আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাও গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকাসহ মহাদেশটির দক্ষিণের ৯টি দেশে সরাসরি ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে। একই পদক্ষেপ নিয়েছে অ্যাঙ্গোলা, মরিশাস ও সেশেলস।

বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অনুকরণে আফ্রিকার তুলনামূলক দরিদ্র ও ছোট দেশগুলোর এসব পদক্ষেপে ব্যাপক ক্ষিপ্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। একে ‘দুঃখজনক’ বলেছে  দেশটি। এর আগে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

জিনের কাঠামোগত দিক থেকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত করোনাভাইরাসের এই ধরন প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার পাশের দেশ বতসোয়ানায়। গত বুধবার বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার জনবহুল প্রদেশ গৌটেংয়ে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বেশির ভাগ ওমিক্রন ধরনে সংক্রমিত হয়েছে। পরে দেশটির অন্য প্রদেশগুলোতেও তা ছড়িয়ে পড়ে।

গতকাল জাপান সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করেছে। আজ ৩০ নভেম্বর থেকে সব বিদেশির ওপর দেশটিতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া গত বছর আরোপিত সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার যে পরিকল্পনা করেছিল গতকাল তা বাতিল করেছে। ফিলিপাইনও টিকার সব ডোজ নেওয়া পর্যটকদের দেশটিতে ঢুকতে দেওয়ার যে পরিকল্পনা করেছিল, তা বাতিল করেছে।

ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ে গতকাল জরুরি বৈঠকে বসার কথা ছিল জি৭- এর স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ