এ প্রজন্মের শিল্পীদের চোখে রাজ্জাক


সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

২০১৭ সালের আজকের দিনে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। অভিনয় জগতে তিনি ছিলেন রাজার মতোই। তাই তার নামের পূর্বে তারই বন্ধু প্রখ্যাত সাংবাদিক আহমাদ জামান চৌধুরীর খোকা ‘নায়করাজ’ বিশেষণটি যুক্ত করে দেন। সেই থেকে তিনি ‘নায়করাজ’ নামেই পরিচিত। রাজ্জাকের সঙ্গে এ প্রজন্মের অনেকেই সিনেমা কিংবা নাটকে অভিনয় করেছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের সিনেমার অভিষেকের আগে দোয়া নিতে গিয়েছেন। এমন কয়েকজন অভিনয়শিল্পী নায়করাজকে নিয়ে স্মৃতিচারণ। সেটাই তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে-

আমার সৌভাগ্য যে শ্রদ্ধেয় এফআই মানিক পরিচালিত নায়িকা হিসাবে আমার প্রথম সিনেমা ‘কোটি টাকার কাবিন’ আমি রাজ্জাক আঙ্কেলকে পেয়েছিলাম। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। পরে সম্রাটকে নিয়ে যখন তিনি ‘আমি বাঁচতে চাই’ সিনেমাটি নির্মাণ করলেন, আমি নায়িকা হলাম, তখনই আসলে তাকে খুব কাছে থেকে দেখা ও অনুভব করা। আমার একটি নাম আছে ‘লক্ষ্মী’, এটা অনেকেই জানেন না। রাজ্জাক আঙ্কেল জানতেন। এ কারণেও তিনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন। কারণ তার স্ত্রীর নামও লক্ষ্মী। তার প্রয়াণ দিবসে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। – অপু বিশ্বাস, চিত্রনায়িকা

আমি সেভাবে আসলে সিনেমার শিল্পী নই। নাটকেই আমাকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে সিনেমাতে অভিনয় করেছি। আমার প্রথম সিনেমা ছিল ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’। সিনেমাটি মুক্তির আগে আমি রাজ্জাক আঙ্কেলের আশীর্বাদ নিতে তার বাসা ‘লক্ষ্মী কুঞ্জ’তে গিয়েছিলাম। মনে আছে সেদিন তিনি সকাল দশটায় তার সঙ্গে নাশতা করতে বলেছিলেন। আমি এবং জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া তার দেয়া সময়েই তার বাসায় উপস্থিত হয়েছিলাম। তিনি আমাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললেন, আমাদের দোয়া করে দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে কাটানো সেই সময়টা এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল।

– জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, অভিনেতা

রাজ্জাক আঙ্কেলের নির্দেশনায় একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের নাটক ‘আমি যুদ্ধে যাব’তে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আঙ্কেলকে সহশিল্পী হিসাবে হয়তো অনেকেই পেয়েছেন। কিন্তু তার নির্দেশনায় কাজ করতে পারাটা আমার কাছে একটু বেশি রোমাঞ্চকর মনে হয়েছিল। আঙ্কেল আমাকে খুব স্নেহ করতেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি যখন পাশে এসে দাঁড়াতেন, কথা বলতেন মনেই হতো না তিনি নায়করাজ! কারণ তিনি তার নিজের মেয়ের মতো আদর ভালোবাসা দিয়ে কাজটা বুঝিয়ে দিতেন। আমার অভিনয় জীবনের বড় প্রাপ্তি তার নির্দেশনায় কাজ করতে পারা।

-বিদ্যা সিনহা মিম, চিত্রনায়িকা

রাজ্জাক আঙ্কেলের দুই সন্তান বাপ্পা ভাই এবং সম্রাট, দু’জনের সঙ্গে আমার কাজ হয়েছে। রাজ্জাক আঙ্কেল এবং লক্ষ্মী আন্টি অবশ্যই ছেলেদের মানুষের মতো মানুষ করেছেন, এখানেই বাবা-মা হিসাবে তারা স্বার্থক। বাপ্পা ভাই, সম্রাট-দু’জনই এত ভদ্র যে, তাদের কথা বিশেষভাবে বলতেই হয়। আর রাজ্জাক আঙ্কেলের নির্দেশনায় আমার সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। তবে ‘দায়ভার’ নাটকে তার নির্দেশনায় অভিনয় করতে পেরেছি, এটাও অনেক বড় প্রাপ্তি। একজন এত বড় নায়ক হয়েও এত ডাউন টু আর্থ ছিলেন তিনি, ভাবাই যায় না।

-আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী

সম্ভবত ২০১২ সালের কথা। সে সময় আমি নায়করাজ রাজ্জাক আঙ্কেলের পরিচালনায় ‘চেনা হয়ে যায় অচেনা’ নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার বিপরীতে ছিলেন সম্রাট ভাই। যতদূর মনে পড়ে উত্তরা, দিয়াবাড়ি এবং রাজ্জাক আঙ্কেলের বাসাতেও শুটিং হয়েছিল। এত বড় মাপের একজন নায়ক, পরিচালকের নির্দেশনা খুব কাছে থেকে দেখেছি। ভীষণ আন্তরিকতা নিয়ে প্রত্যেকটি দৃশ্য সমান যত্ন নিয়ে নির্মাণ করতেন। তার মতো এমন ব্যক্তিত্বর সঙ্গে কাজ করতে পারাটা ছিল আমার জন্য ভীষণ ভালোলাগার। তিনি হয়তো আজ আমাদের মাঝে নেই, তবুও তিনি আছেন তার কর্মে।

-মেহজাবীন চৌধুরী, অভিনেত্রী

আমার প্রথম সিনেমা মনতাজুর রহমান আকবর স্যার পরিচালিত ‘কঠিন বাস্তব’-এ আমি রাজ্জাক আঙ্কেলের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। পরে আরও বেশ কয়েকটি সিনেমাতে অভিনয়ের সুযোগ পাই। তার নির্মিত শেষ সিনেমা ‘আয়না কাহিনি’তেও আমাকে নায়িকা হিসাবে নিয়েছিলেন। এটাও আমার পরম সৌভাগ্য। আমাকে তিনি এবং লক্ষ্মী আন্টি নিজের মেয়ের মতোই আদর করতেন। ‘বাবা’ বলে ডাকতাম বিধায় তার চলে যাওয়ায় আমার নিজের ভেতর এখনো যে কষ্ট, হাহাকার তা বলে বোঝানোর মতো নয়। প্রতি মুহূর্তে তার শূন্যতা, তার আদর স্নেহ ভীষণ মিস করি।

-কেয়া, চিত্রনায়িকা

সূত্র : যুগান্তর