এবি ব্যাংকের রাজশাহীর প্রতারিত সেই এ্যাজেন্টদের কাটছে মানবেতর জীবন


নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় দুই বছর আগে চাকরির আশায় ধার-দেনা করে দুই লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন বাপের একমাত্র বেকার ছেলে মিঠুন আলী। সেই টাকা দিয়ে রাজশাহীর আমগাছী বাজারে এবি ব্যাংকের আউটলেটের ইনচার্জ পদে। মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু দুই মাস ৬ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হয়। এর পর আর কোনো বেতন দেওয়া হয়নি।

বেতন দিব দিচ্ছি করে দিনের পর দিন ঘুরানো হচ্ছে মিঠুন আলীকে। চাকরির নামে প্রতাণার শিকার মিঠুন একদিকে যেমন সংসারে কোনো সহযোগিতা করতে না পারায় অসহায় হয়ে পড়েছেন, তেমনি ধারের টাকাও শোধ করতে না পারায় পাওনাদারদের চাপে রয়েছেন বিপাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু মিঠুন আলীই নন, তাঁর মতো এবি ব্যাংকের আউটলেটে চাকরি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর অন্তত অর্ধশতাধিক বেকার যুবক। এ নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠে এর আগে গত বছরের ১২ অক্টোবর একটি অনুসন্দানী সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসেছিল ব্যাংকটির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। পরবর্তিতে সেলিম রেজা ওই বেকার যুবকদের নিকট থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেও সেটি রাখেননি। এখন তিনি পলাতক রয়েছেন।

জেলার বিভিন্ন স্থানে ১২টি এ্যাজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট খুলে এসব বেকারদের নিকট থেকে জামানত নামে কয়েক কোটি টাকা আদায় করা হলেও অধিকাংশই পড়েছেন এখন বিপাকে। কেউ কেউ চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে এখন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে টাকা নিয়ে পলাতক রয়েছেন এসব আউটলেটের সত্বাধীকারী সাদিয়া রোমানার স্বামী সেলিম রেজা।

রাজশাহী নগরীর কোর্ট এলাকার বাসিন্দা সেলিম রেজা নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী যুবক-যুবতীরা এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েও অভিযোগ করেছেন। এর পর প্রতারক সেলিমকে এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ডেকে পাঠিয়ে প্রতারিত যুবকদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় সেসময়। সেলিম কালের কণ্ঠকেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু আউটলেট থেকে তেমন ব্যবসা না হওয়ায় তিনি জামানতের টাকা ফেরত দিতে পারছেন না বলেও দাবি করেছেন।

দুর্গাপুরের আমগাছী হাট এ্যাজেন্ট আউটলেটের হিসাব কর্মকর্তা আদরি খাতুন বলেন, ‘সুদের ওপর দুই লাখ টাকা নিয়ে এবি ব্যংাকের আউটলেটে চাকরি নিয়েছিলাম। এখন গত প্রায় এক বছর ধরে আমাদের কোন বেতন দেওয়া হয়নি। ফোন করলেও সেলিম আর ফোন রিসিভ করেন না। বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায় না। এদিকে সুদের ওপর নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে না পারায়, পাওনাদার ব্যাপক চাপাপাপি করছে বাড়িতে গিয়ে। এ কারণে শ্বশুর বাড়ির লোকজনও আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে। আমি এখন নিরুপায়। আমি চাকরি চাই না আর, আমার জামানতের টাকাগুলো ফেরত দিলেই হবে। না হলে আমার সংসার ভেঙে যাবে।

ওই আউটলেটে চাকরি নেওয়া ফরহাদ আলী বলেন, ‘আমাকে ১০ হাজার টাকা বেতন দিবে বলে এক লাখ টাকা নিয়েছেন সেলিম রেজা। কিন্তু প্রথম দুই মাস মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতন দিয়েছেন। এর পর গত এক বছর আর বেতন দেয়া হয়নি। আবার যে টাকা দিয়েছি, সেটি সুদের ওপর। প্রতিদিন এখন পাওনাদার আসে বাড়িতে টাকা নিতে। ওই টাকাও দিতে পারছি না। এ কারণে বাড়িতে অশান্তি লেগেই আছে।’

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আউটলেটের সত্বাধিকারী সাদিয়া রোমানার স্বামী সেলিম রেজা জামানতের টাকা সবাইকে ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু ব্যবসা খারাপ হওয়ায়ই কাউকে সেটি দিতে পারছি না। আশা করছি দ্রুতই ফেরত দিতে পারব।’

জানতে চাইলে এবি ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ম্যানেজার এটিএম নূরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা কিছু শর্তসাপেক্ষে আউটলেটের অনুমোদন দেয়। বেতনের বিষয়টি যিনি আউটলেট নেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন না।’