এনআইডি নিয়ে বিপাকে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক-এজেন্ট

সিল্কসিটিচনিউজ ডেস্ক :

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইফতি রোজ মাসের শুরুতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাকে নিয়মিত টাকা পাঠান। চলতি মাসে টাকা পাঠাতে গিয়েই পড়েন বিড়ম্বনায়। জাতীয় পরিচয়পত্র বা ফটোকপি না থাকায় তার টাকা নিচ্ছেন না এজেন্ট। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি পরে দিয়ে যাবেন এমন শর্তে পরিচিত সেই এজেন্ট অবশ্য টাকা গ্রহণ করেন।

ইফতির মতো আরও অনেকে সম্প্রতি এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। এর প্রভাবও পড়েছে মোবাইল ব্যাংকিং লেনেদেন।

অর্থ পাঠানোর সীমা কমানোর পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বাধ্যবাধকতা থাকায় লেনদেনের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়েছেন গ্রাহকরা। এজেন্টদেরও অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

রাজধানীর বাড্ডা, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ফার্মগেট ও মিরপুরের ১১ জন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট তাদের ব্যবসা কমে যাওয়ার কথা জানান। তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নিয়মের বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেকে এখন বেশি টাকা পাঠাতে অনিহা দেখাচ্ছেন।

পাঠানো অর্থের পরিমাণ পাঁচ হাজারের বেশি হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতে হচ্ছে এজেন্টদের। দৈনিক ও মাসিক অর্থ পাঠানো ও তোলার সীমাও আগের চেয়ে কমানো হয়েছে।

কারওয়ান বাজার এলাকার সোহেল টেলিকমের মালিক মো. সোহেল রানা বলেন, বিকাশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কড়াকড়ি করায় এজেন্ট পরিচয়পত্রের ফটোকপি রাখার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন।

এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয় বলে জানালেন মিরপুরের এক বিকাশ এজেন্ট। তিনি বলেন, পরিচয়পত্র চাইলে অনেকেই খেপে যাচ্ছেন। এদের বড় অংশ টাকা না পাঠিয়ে চলে যাচ্ছেন।

রফিকুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক বাড্ডার অর্নি টেলিকম দোকানে আসেন টাকা পাঠাতে। সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ায় তিনি যে পরিমাণ টাকা পাঠাতে চান তা একদিনে পাঠানো যাবে না। তিনি অপব্যবহার হতে পারে বলে পরিচয়পত্র দিতেও অস্বীকৃতি জানান।শেষে অভিনব বুদ্ধি ‘আবিষ্কার’ করে দুই দিনে পর্যায়ক্রমে টাকা পাঠিয়েছেন।

রফিকুল টেকশহর ডটকমকে বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে কয়েকদিন পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কেউ আর টাকা পাঠাতে চাইবেন না। এর মাধ্যমে কি ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে তারা সেটা ভেবে পাচ্ছেন না।

বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির টেকশহর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূরক করা হয়েছে। ইতিবাচক দিক বিবেবচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন একটু ঝক্কি পোহাতে হলেও নিরাপদে সবাই বিকাশ ব্যবহার করবেন বলে তারা আশা। তিনি বলেন, তবে কেউই চায় না গ্রাহকের হয়রানি করতে।

দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, এখনও জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার সবক্ষেত্রে নিয়মিত হয়নি। এমন প্রক্রিয়ায় হয়তো গ্রামাঞ্চলে বেশি সমস্যা হতে পারে ফটোকপির ব্যবস্থা না থাকায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

এমন শর্তারোপে বিকাশে লেনদেন কমার বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল কাদির বলেন, এটা খুব ভালো বলতে পারবেন এজেন্টরা। কারণ তারাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টি অনলাইন লেনদেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া যায়। তবে সেটা সবাইকে জানানোর ব্যবস্থা করা দরকার।

তার মতে, বিকল্প ব্যাংকিং হিসেবে কখনই এর সীমা টানা উচিত হবে না।

বেশ কয়েকজন বিকাশ এজেন্ট ও গ্রাহক অবশ্য বলছেন, আইডি কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে জালিয়াতি কমানো বা বন্ধ করা গেলে সেটিকে ইতিবাচকভাবে নিতে হবে।

সূত্র : টেকশহর