এক সেট ডাকটিকেট: পাক-ভারত শত্রুতায় নতুন উপকরণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নিউ ইয়র্কে এ সপ্তাহে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় ভারত এবং পাকিস্তানের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে একটি বৈঠক নির্ধারিত হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে।

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে এই বৈঠকের প্রস্তাব করেছিলেন। ভারত রাজী হয়েছিল।

আশা করা হচ্ছিল, পাকিস্তানে নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই বৈরি প্রতিবেশীর মধ্যে নতুন করে এক শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে। ২০১৪ সালে শান্তি আলোচনা ভেঙ্গে যাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে কোনো কথাবার্তাই হয়নি।

কিন্তু ভারত শেষ মূহুর্তে বৈঠকটি বাতিল করে দেয়।

বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের ‘অশুভ পরিকল্পনা’ প্রকাশ হয়ে গেছে এবং বিশ্বের কাছে প্রধানমন্ত্রী ইমরানে খানের ‘আসল রূপ’ বেরিয়ে পড়েছে।

কেন হঠাৎ এতোটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো ভারত। ইসলামাবাদ থেকে বিবিসির মোহাম্মদ ইলিয়াস খান বলছেন অন্যতম প্রধান কারণ, এক সেটা স্মারক ডাকটিকেট।

কাশ্মীরি জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানিকে হত্যার প্রতিবাদে পাকিস্তানের লাহোর বিক্ষোভ (ফাইল ছবি)কাশ্মীরি জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানিকে হত্যার প্রতিবাদে পাকিস্তানের লাহোর বিক্ষোভ (ফাইল ছবি)

কী আছে ঐ ডাকটিকেটে?

পাকিস্তানের ডাক বিভাগ সম্প্রতি “ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে নির্যাতন” শিরোনামে ২০টি টিকেটের একটি সেট প্রকাশ করেছে।

একেকটি টিকেটে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনার ছবি রয়েছে। যেমন, কথিত রাসায়নিক অস্ত্রের শিকার মানুষদের ছবি রয়েছে, ছররা বন্দুকের গুলিতে আহত মানুষের ছবি রয়েছে, “ভুয়া পুলিশ এনকাউন্টারের” ছবি রয়েছে।

একটি ডাকটিকেটে ২০১৬ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত জনপ্রিয় কাশ্মীরি জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির ছবি রয়েছে। তাকে বর্ণনা করা হয়েছে “মুক্তির প্রতীক” হিসাবে। বুরহান ওয়ানির হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনও ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অসন্তোষ চলছে।

ফারুক আহমেদ দার নামে যে কাশ্মীরী যুবককে ভারতের সেনাবাহিনীর একটি জীপের সামনের বাম্পারে বেঁধে গাড়ি চালানো হয়েছিল, সেই ছবিও রয়েছে একটি ডাকটিকেটে।

প্রতিটি টিকেটের বাঁদিকে উর্দুতে একটি বাক্য লেখা রয়েছে – “কাশ্মীর একদিন পাকিস্তান হবে।”

এর আগে ১৯৬০ সালে পাকিস্তান আরেকবার কাশ্মীর নিয়ে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছিল। সেখানে পাকিস্তানের মানচিত্রের মধ্যে কাশ্মীরকে দেখানো হলেও ভিন্ন রঙ দেওয়া হয়েছিল। টিকেটে লেখার সুরও ছিল অপেক্ষাকৃত অনেক নরম – “জম্মু ও কাশ্মীর; চূড়ান্ত ভবিষ্যৎ এখনও অনির্ধারিত।”

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজে নিউ ইয়র্কে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব করেছিলেন

এই ডাক টিকেট প্রকাশের সিদ্ধান্ত কার ?

পাকিস্তান ডাক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বিবিসিকে বলেন, যে কেউই স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশের প্রস্তাব করতে পারেন।

“প্রস্তাব ডাক বিভাগের অনুমোদন পেলে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে। ডাকটিকেটের বিষয়ের সাথে যদি বৈদেশিক সম্পর্কের কোনো সম্পর্ক থাকে, তাহলে তা পাঠানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় প্রধানমন্ত্রীর অফিস।”

এই ডাকটিকেট প্রকাশিত হয় ২৪শে জুলাই, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের একদিন আগে। অর্থাৎ ইমরান খানের ক্ষমতা গ্রহণের ২৫ দিন আগে।

পর্যবেক্ষকদের তাই ধারণা ভারতের সাথে সম্পর্কে কট্টর মতবাদ পোষণ করেন, সরকারের ভেতর এমন কিছু ব্যক্তির সিদ্ধান্তেই এই ডাকটিকেট প্রকাশিত হয়েছে।

কেমন বিক্রি হচ্ছে?

পাকিস্তানে ডাক টিকেট সংগ্রহকারীরা বলছেন, কাশ্মীরের ওপর স্মারক এই ডাকটিকেট বিদেশে ভালো বিক্রি হচ্ছে। বিশটির এক সেট বিক্রি হচ্ছে ছয় মার্কিন ডলারে।

ইসলামাবাদে একজন ডাক কর্মকর্তা জানান, গত কদিনে তিনি শ তিনেক সেট বিক্রি করেছেন। এক সেটের দাম ১.৩০ মার্কিন ডলার।

মাত্র ২০,০০০ সেট ছাপা হয়েছে। প্রায় সবই বিক্রি হয়ে গেছে। বিশেষ করে এ নিয়ে বিতর্কের খবর প্রকাশের পর চাহিদা বেড়ে যায়।