উজির মিয়ার মৃত্যু: দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে পুলিশের নির্যাতনের অভিযোগে উজির মিয়া (৪০) মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছেন আদালত।

মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার বিকালে মামলার বাদী নিহতের ভাই ডালিম মিয়ার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে এ আদেশ দেন সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার।

এর আগে গত সোমবার দুপুরে নিহত উজির মিয়ার ভাই ডালিম মিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে বুধবার মামলার গ্রহণযোগ্যতা শুনানির দিন ধার্য করেন।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সদ্য ক্লোজড হওয়া শান্তিগঞ্জ থানার সাবেক এসআই দেবাশীষ সূত্রধর ও শান্তিগঞ্জ থানার এসআই আলাউদ্দিনকে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী রবিউল লেইস রোকেস বলেন, আদালত বুধবার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। আমাদের দাবি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের যেন শাস্তি নিশ্চিত হয়।

মামলার বাদী ডালিম মিয়া বলেন, পুলিশ আমার নির্দোষ ভাইকে চোর অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের দাগ মানুষ দেখেছে। দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা আদালতে মামলা করেছি। আশা করি আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাব।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি রোববার উজির মিয়াকে নির্যাতনের অভিযোগে শান্তিগঞ্জ থানার সাবেক এসআই দেবাশীষ সূত্রধরকে দিরাই থানা থেকে ক্লোজড করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। অপর এসআই আলাউদ্দিন শান্তিগঞ্জ থানায় কর্মরত আছেন।

প্রসঙ্গত, শান্তিগঞ্জের শত্রুমর্দন গ্রামের বাসিন্দা উজির মিয়া ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে গরু চুরির ঘটনায় উজির মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় শান্তিগঞ্জ থানার পুলিশ। এরপর থানায় নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন তাকে চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

ওই দিনই আদালত থেকে উজির মিয়া জামিনে ছাড়া পান। বাড়িতে আসার পর উজির মিয়ার সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। এরপর উজির মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে তাকে আবার বাড়িতে আনা হয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ছাতকের কৈতক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালে মৃত্যুর পর তার লাশ এলাকায় নিয়ে আসলে সেখানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উজির মিয়ার লাশ সড়কে রেখে অবরোধে নামেন স্বজনসহ হাজারও মানুষ। ওই দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) ৩ ঘণ্টা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন।

 

সূত্রঃ যুগান্তর