উজবেকিস্তানে ৯৯তম দেশ ভ্রমণ করলেন বাংলাদেশী কাজী আসমা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাভেলার্সদের মধ্য অন্যতম এক নাম কাজী আসমা আজমেরী। বাংলাদেশি হিসেবে তিনি একমাত্র ব্যক্তি বাংলাদেশের সবুজ রঙের পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। তুলে ধরছেন বাংলাদেশের মানচিত্র।
গত বুধবার (২৪ অক্টোবর ২০১৮) কাজী আসমা আজমেরী বাংলাদেশি অ্যাম্বাসির আমন্ত্রণে ৯৯ দেশ ভ্রমণ হিসেবে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে বাংলাদেশ অ্যাম্বেসিতে উদযাপন করেন। সেখানে তিনি তার ৯ বছরের ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা সবার সামনে তুলে ধরেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশের সফলতার দেশ হিসেবে তিনি অতিথি বক্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। বাংলাদেশ নিয়ে তার স্বপ্নের কথাও ব্যক্ত করেন।

উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর এক্সট্রাঅর্ডিনারি মাসুদ মান্নান। ভারতের অ্যাম্বাসেডর, বুলগেরিয়ার অ্যাম্বাসেডর, আলবেনিয়া অ্যাম্বাসেডর, জর্জিয়ার অ্যাম্বাসেডর, জর্ডানের অ্যাম্বাসেডারসহ অনেকে।
কাজী আসমা আজমেরী একজন রোটারিয়ান। তিনি রোটারিয়ার সম্পর্কে কিছু কথা তুলে ধরেন। কাজী আসমা আজমেরী উজবেকিন্তানে একমাস থাকবেন। সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশির সাথে কাজ করবেন। এর পর তিনি শততম দেশের উদ্দেশে পারি জমাবেন। এখনো নির্দিষ্ট করে ঠিক করতে পারেননি কোন দেশে শততম ‘দেশ ভ্রমণ’ উদযাপন করবেন। কারণ ভিসা জটিলতা। দেশভ্রমণে আর একটি মাত্র দেশ ঘুরলেই আসমা সেঞ্চুরি করবেন। তার দুই চোখ ভরে উঠবে ১০০টি দেশ দেখার আলোয়।

আসমা জন্মগ্রহণ করেন খুলনার বিখ্যাত কাজী পরিবারে। বড় হয়েছেন খুলনা শহরে। তার বাবার নাম কাজী গোলাম কিবরিয়া। মায়ের নাম কাজী সাহিদা আহমেদ। বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে কাজী আসমা আজমেরী।

আসমা বড় ইকবালনগর গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তারপর খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে (বিবিএ) মার্কেটিং-এ স্নাতক করেন। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে একই বিষয়ে এমবিএ করেন।

কাজী আসমা আজমেরী ২০০৮সালে থেকে দেশ ভ্রমণ করতে শুরু করেন। দেশ ভ্রমণ কিভাবে শুরু হলো জানতে চাই কাজী আসমা আজমেরী বলেন, ‘আসমা ছোটবেলায় মায়ের সাথে স্কুলে আসা-যাওয়া করতাম। একদিন স্কুল ছুটির পর তার মা নিতে এলেন না। অবশেষে আমি একাই সাহস করে বাসার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটছি আর তাকিয়ে দেখছি আকাশটাকে। আকাশ দেখে মনে হলো, সে আকাশের শেষ সীমানা দেখবে। কিন্তু আকাশের শেষ সীমানা আর দেখা পায় না। সে দিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাঁটেছিলাম। পরে কাজী বাড়ি ছোট্ট মেয়েকে দেখে এলাকাবাসী আমাকে ধরে নিয়ে বাসায় পৌঁচ্ছে দেন। আমার এক বন্ধুর মা আমাকে বলেছিলেন, তুমি একজন দুর্বল ও যোগত্যহীন মেয়ে। আমার ছেলে ২০ দেশ ঘুরেছে। আর তুমি মাত্র দুটো দেশ ঘুরেছ। তখন আমি চ্যাঞ্জেন করেছিলাম। আমিও দেশ ভ্রমণ করে দেখিয়ে দেব। কমপক্ষে হলো ৫০টি দেশ ঘুরব। ৫০টি দেশ ভ্রমণ করে থেমে থাকেনি। আমি ঘুরছি। এখন ৯৯টি দেশে উজবেকিস্তানে আছি। পৃথিবীর সব দেশ ভ্রমণ করার ইচ্ছা আছে আমার।’

 

উল্লেখ্য, কাজী আসমা আজমেরী ২০০৮ সালে প্রথম দেশ হিসেবে থাইল্যান্ডে দিয়ে ভ্রমণ যাত্রা শুরু করেন। এর পর ২০০৯ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং। ২০১০ সালে কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, চীন, ম্যাকাউ, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সাইপ্রাস, তুরস্ক, মিশর, মরক্কো, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১১ সালে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, জাপান।

২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, নিউজিল্যান্ড, কুক দ্বীপ, টঙ্গা। ২০১৩ সালে নিউ ক্যালেডোনিয়া, তাহিতি, সলোমন দ্বীপ, নিউ, কিরিবাটি তাইওয়ান, ভানুয়াতু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট। ২০১৪ সালে মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এল সালভাডর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা, পানামা, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর। ২০১৫ সালে পোর্ট রিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বেলিজ, জ্যামাইকা, বাহামা, আরুবা। ২০১৬ সালে ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, কোসোভো, আবলানিয়া, ম্যাসেডোনিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মোল্দাভিয়া, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইতালি, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, নরওয়ে, কুয়েত। ২০১৭ সালে কিউবা, সামোয়া, কাতার। ২০১৮ সালে ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কানাডা, জর্জিয়া, বেলারুশ, আজারবাইজান, চেচনিয়া।

কাজী আসমা আজমেরী এখন অবস্থান করছেন উজবেকিস্তানে।

স/শ