উচ্চ হারে সুদ, গ্যাড়াকলে নওগাঁর চালকল মালিকরা

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ
মফস্বল অঞ্চলে কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রতি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূন:অর্থায়নের স্কীমটি মুখ থুবরে পড়ে আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই স্কীমের সুযোগ-সুবিধা থেকে উদ্যোক্তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন নওগাঁর চাউলকল মালিকরা।

পুন:অর্থয়নের বিনিয়োগ করতে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর উদাসীনতার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, বেসরকারী ব্যাংকের উচ্চ হারে সুদের কাছে ক্রমেই হেরে যাচ্ছেন জেলার চাল উৎপাদনকারী ক্ষুদ্র শিল্প মালিকরা। বন্ধ হয়ে পরছে শিল্প প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৭ টি কৃষি ভিত্তিক শিল্পের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের জন্য সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হার সুদে পূন:অর্থায়নের স্কীম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৪ সাল থেকে বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে এই কার্যক্রম চালুর নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝাড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন-নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেয়াই ছিলো স্কীমের মূল উদ্দেশ্য।

কিন্তু মফস্বলে মুখ থুবরে পড়ে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই অর্থায়ন স্কীম। দেশে ধান ও চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় জেলা নওগাঁর চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তা বা মিলাররা বলছেন- স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে তারা পূন:অর্থায়নের সুযোগ পাচ্ছেন না। আবেদন করলে নানা অজুহাত ও জটিলতা দেখাচ্ছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।

জেলা চাল কল মালিক গ্র“পের সাবেক সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম বাবু জানান,  নওগাঁয় ছোট, মাঝাড়ি ও ক্ষুদ্র মিলে প্রায় দেড় হাজার চালকল আছে। এরসাথে আছে কৃষিভিত্তিক উৎপাদনশীল আরো অন্তত দুই হাজার ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগই অর্থায়নের অভাবে মুখ থুবরে পড়ে আছে। পুন:অর্থায়নের সুযোগ না পাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে উদ্যোক্তাদের দিতে হচ্ছে উচ্চ হারে সুদ। ফলে ক্রমেই নতুন-নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে  আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান এখনও টিকে আছে সেগুলোর আর সম্প্রসারণ করাও সম্ভব হচ্ছে না।

নওগাঁ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির প্রতিনিধি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজ কুমার আগরাওয়াল বলেন, পুন:অর্থায়নের স্কীমের সুযোগ না দিয়ে স্থানীয় বেসরকারী ব্যাংকগুলো তাদের মুনাফা অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিজস্ব স্ত্রীম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে তারা মুনাফা নিচ্ছেন উচ্চ হারে। অনেক সময় শতকরা ১৩ থেকে ১৮ পার্সেন্ট পর্যন্ত মুনাফা দিতে ব্যাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এতে অনেক শিল্প মালিক দেউলিয়া হয়ে প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত হারাতে বসেছেন।

এদিকে অধিকাংশ উদ্যোক্তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূন:অর্থায়নের স্কীম গ্রহনে ব্যাংকের শর্ত পূরনে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন বেসরকারী স্থানীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক এসএম জাকির হোসেন সংবাদকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক পুন:অর্থায়নের স্কীম চালু করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ উদ্যোক্তা ব্যাংক লেন-দেনসহ অন্যান্য শর্ত পূরন না করায় তাদের এই স্ক্রীমের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূন:অর্থায়নের স্ক্রীমের প্রতি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তারা কখনই উদাসীন নয় বলে দাবি করে তিনি।

 

স/আ