ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় যেসব বাংলা চলচ্চিত্র

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

নতুন সিনেমার মাধ্যমে ঈদ বিনোদনটা বেশ পুরনো। বিগত কয়েক দশকে ঢালিউড চলচ্চিত্রের অনেক চড়াই-উৎরাই হলেও ঈদের সময় বাংলা ছবির শোরগোলটা ছিল স্বাভাবিক। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এমনকি ব্যবসায়িক সিনেমাগুলোর পাশাপাশি মূলধারার কাতারে শামিল হচ্ছে শৈল্পিক ও নিরীক্ষাধর্মী ছবিগুলোও। তাই ভিন্ন স্বাদে বাড়ছে দর্শকদের প্রত্যাশা। চলুন, ঈদ-উল-ফিতর-এ মুক্তির অপেক্ষায় থাকা তেমনি কিছু বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।

রাজকুমার
২০২২ সালের ২৯ মার্চ সিনেমার ফার্স্ট লুক প্রকাশের পর থেকেই হৈচৈ শুরু হয়েছে “রাজকুমার” নিয়ে। রোমান্টিক-অ্যাকশন ঘরানার এই মুভিতে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের নায়িকা হয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী কোর্টনি কফি। আর এ নিয়ে মোট তিনটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করলেন পরিচালক হিমেল আশরাফ। এখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মোস্তফা, আফজাল হোসেন, ফারুক আহমেদ এবং ডা. এজাজ।

“রাজকুমার” বাংলাদেশের একটি গ্রাম্য যুবকের আমেরিকার যান্ত্রিক শহরে তার মাকে খোঁজার গল্প। এই অক্লান্ত যাত্রায় একে একে যুবকটি সম্মুখীন হয় অভিবাসন বাধা, ভিন্ন সংস্কৃতি, এমনকি প্রেম-ভালবাসার।

কাজলরেখা
দেশের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রকার গিয়াস উদ্দিন সেলিমের দীর্ঘ ১২ বছরের গবেষণার ফসল এই চলচ্চিত্র। মৈমনসিংহ গীতিকার “কাজলরেখা” অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটির গল্প, পরিচালনা এবং প্রযোজনা করেছেন সেলিম নিজেই। সিনেমার পটভূমিক আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের।

মুভির নাম ভূমিকায় দেখা যাবে মন্দিরা চক্রবর্তীকে। সুচ কুমারের ভূমিকায় থাকছেন শরিফুল রাজ। আর খলচরিত্র কঙ্কণ দাসী হিসেবে রয়েছেন রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। চলচ্চিত্রটিতে আরও আছেন ছোট পর্দার তারকা খায়রুল বাশার, সাদিয়া আয়মান, ইরেশ যাকের, আজাদ আবুল কালাম, ও শাহানা সুমি।

লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী
ওটিটি (ওভার-দ্যা-টপ) প্ল্যাটফর্ম চরকি’র “মিনিস্ট্রি অব লাভ” প্রজেক্টের ১২টি ওয়েব ফিল্মের একটি “মনোগামী”। পরিচালনায় আছেন স্বয়ং প্রজেক্ট তত্বাবধায়ক প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। প্রজেক্টের অধীনে ইতোমধ্যে তার পরিচালিত ও অভিনীত “অটোবায়োগ্রাফি” ফিল্মটি বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবারের ঈদ-উল-ফিতরে “মনোগামীর” মাধ্যমে তিনি তুলে ধরতে যাচ্ছেন নারী-পুরুষের সম্পর্কের তিক্ত সত্য কিছু দিক। এর আগে তার এই প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছিল “ব্যাচেলার” (২০০৪) ছবিতে। এবারে আলোকপাত করা হয়েছে বিবাহিত জীবনের দিকে।

সিনেমার শ্রেষ্ঠাংশে রয়েছেন এ সময়ের বিনোদন পাড়ার সবচেয়ে পরিচিত মুখ চঞ্চল চৌধুরী। তার সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে আছেন সঙ্গীতশিল্পী ও ইউটিউবার জেফার রহমান এবং নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমাকে।

 রাজকুমার, কাজলরেখা, লাস্ট ডিফেন্ডার অব মনোগামী, দেয়ালের দেশ, এবং ওমর/কোলাজ

দেয়ালের দেশ
বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত এই রোমান্টিক ছবির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো চিত্র-পরিচালনা করলেন মিশুক মনি। ছবির কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্যও সবই তার লেখা। চলচ্চিত্রের গল্প এগিয়েছে দুটি ভিন্ন সময়কে কেন্দ্র করে।

“দেয়ালের দেশ”-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জুটিবদ্ধ হয়েছেন শরিফুল রাজ ও শবনম বুবলী। ব্যবসায়িক ছবির নায়িকা হিসেবে সুপরিচিত বুবলীকে এবার দেখা যাবে অকৃত্রিম বাস্তবধর্মী চরিত্রে। চলচ্চিত্রের অন্যান্য সহশিল্পীরা হলেন জিনাত শানু স্বাগতা, আজিজুল হাকিম, সাবেরী আলম, শাহাদাত হোসেন, এ কে আজাদ সেতু, সমাপ্তি মাশুক, এবং দীপক সুমন।

মেট্রো সিনেমার ব্যানারে যৌথভাবে ছবির প্রযোজনা করেছেন মাহফুজুর রহমান ও মিশুক মনি।

ওমর
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী চলচ্চিত্রকার মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ দীর্ঘদিন পর বিনোদন পাড়ায় ফিরছেন “ওমর”-এর মাধ্যমে। মুভির শিরোনামটি ঠিক করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। ছবির গল্প নিয়ে এখনও “ওমর” টিমের কেউই তেমন কিছু প্রকাশ করেননি। তবে চিত্রনাট্য লিখেছেন সিদ্দিক আহমেদ।

চলচ্চিত্রের নাম চরিত্রে রয়েছেন শরীফুল রাজ। বিশেষ একটি চরিত্রে আবির্ভূত হবেন কলকাতার অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। এছাড়া আরও থাকছেন ফজলুর রমান বাবু, নাসির উদ্দিন খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, এরফান মৃধা শিবলু, ও আয়মান সিমলাকে। মাস্টার কমিউনিকেশন্সের ব্যানারে মুভির প্রযোজনায় ছিলেন খোরশেদ আলম।

মায়া: দ্য লাভ
স্বরচিত কাহিনী, সংলাপ, ও চিত্রনাট্য নিয়ে জসিম উদ্দিন জাকির পরিচালনা করেছেন “মায়া: দ্য লাভ”। রোমান্টিক ঘরানার এই সিনেমায় শবনম বুবলীর বিপরীতে রয়েছেন তিন অভিনেতা; সাইমন সাদিক, জিয়াউল রোশান, এবং আনিসুর রহমান মিলন।

তিন নায়ক ও এক নায়িকার চতুর্মুখী প্রেমকাহিনী নিয়ে এগিয়ে গেছে এই চলচ্চিত্রের গল্প। বুবলী এই প্রথম কোনও মুভিতে তিন নায়কের বিপরীতে অভিনয় করলেন। সিনেমাটির প্রযোজক হিসেবে আছেন আলিনুর আশিক ভুঁইয়া।

এশা মার্ডার: কর্মফল

মিশন এক্সট্রিম মুভি সিরিজ-খ্যাত পরিচালক সানী সানোয়ারের নতুন চমক “এশা মার্ডার: কর্মফল”। পরিচালক নিজেও পেশায় একজন গোয়েন্দা পুলিশ হওয়ায় রহস্য ও অপরাধ জগতের সরব উপস্থিতি থাকবে চলচ্চিত্রে। সিনেমাটি পটভূমিতে আছে আজিমপুরে ঘটে যাওয়া একটি খুনের সত্য ঘটনা।

শ্রেষ্ঠাংশে নারী পুলিশ কর্মকর্তার বেশে আবির্ভূত হবেন আজমেরী হক বাঁধন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে পূজা ক্রুজকে। এর বাইরেও সিনেমাটিতে রয়েছে এক ঝাঁক তারকা। তারা হলেন শতাব্দী ওয়াদুদ, শহিদুজ্জামান সেলিম, শরীফ সিরাজ, মিশা সওদাগর, মাজনুন মিজান, সুমিত সেনগুপ্ত, ফারুক আহমেদ, এজাজ আহমেদ, নিবির আদনান নাহিদ, আনিসুল হক বরুণ, সুষমা সরকার এবং দীপু ঈমাম।

মায়া: দ্যা লাভ, এশা মার্ডার: কর্মফল, মোনা: জ্বীন-২, মেঘনা কন্যা, এবং আহারে জীবন/কোলাজমায়া: দ্যা লাভ, এশা মার্ডার: কর্মফল, মোনা: জ্বীন-২, মেঘনা কন্যা, এবং আহারে জীবন/কোলাজ

মোনা: জ্বীন-২
“জ্বীন” চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় জাজ মাল্টিমিডিয়া এবারের ঈদ-উল-ফিতরে নিয়ে আসছে “মোনা: জ্বীন-২”। সিক্যুয়াল হলেও এতে আগের চলচ্চিত্রের অনেক কিছুই পরিবর্তন করা হচ্ছে। পরিচালনায় নাদের চৌধুরীর বদলে থাকছেন কামরুজ্জামান রোমান। আর নাম ভূমিকায় পূজা চেরীর পরিবর্তে রয়েছেন নতুন মুখ সুপ্রভাত।

জামালপুরের এক বাড়িতে জ্বীনের উৎপাত নিয়ে সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে “মোনার” চিত্রনাট্য। জ্বীনের ভয়ে নিজ বাড়িতে থাকতে না পেরে মালিক বাড়িটি ভাড়া দেন একটি মাদ্রাসাকে। কিন্তু সেই মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরাও কিছু দিনের মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। নানা রকম ভৌতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে এক পর্যায়ে উন্মুক্ত হতে শুরু করে আসল রহস্য।

“মোন: জ্বীন-২”-এর অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন আহমেদ রুবেল, তারিক আনাম খান, দীপা খন্দকার, আরিয়ানা, সামিনা বাসার, সাজ্জাদ হোসেন, মাহমুদুল হাসান মিঠু, শেহজাদ ওমর, রেবেকা, এবং শামীম।

মেঘনা কন্যা
ফুয়াদ চৌধুরী পরিচালিত এই অপরাধ-সংক্রান্ত নাট্য-চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে নারী পাচারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। একদিকে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে নিষিদ্ধপল্লীর অন্ধকার জগতের দিকে, অন্যদিকে এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শহুরে নারীদের অসহায়ত্বকে। সিনেমার সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন আহমেদ খান হীরক ও ফাহমিদুর রহমান।

“মেঘনা কন্যার” প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, কাজী নওশাবা আহমেদ, শতাব্দী ওয়াদুদ, সেমন্তি দাস সৌমি এবং সাজ্জাদ হোসেইন। মুভিটির সংগীত পরিচালনা করেছেন চিরকুট ব্যান্ডের প্রধান ভোকালিস্ট শারমিন সুলতানা সুমি।

আহারে জীবন
এই চলচ্চিত্রটির মধ্য দিয়ে প্রায় ২৫ বছর পর একসঙ্গে হলেন গুণী নির্মাতা ছটকু আহমেদ এবং প্রখ্যাত চিত্রনায়ক ফেরদৌস। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্রটি পরিচালনার পাশাপাশি রচনাও করেছেন ছটকু আহমেদ। সামাজিক ছবিটির পটভূমিতে রয়েছে করোনাকালীন দুর্দশা ও নানা ধরনের সামাজিক টানাপোড়েন।

ফেরদৌসের সঙ্গে “আহারে জীবন” সিনেমায় জুটি বেধেছেন নায়িকা পূর্ণিমা। এছাড়া অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুচরিতা, জয় চৌধুরী, মিশা সওদাগর, কাজী হায়াত, তুষার খান, মারুফ আকিব, মৌমিতা মৌ, সাহানুর রেবেকা এবং অহনা আঁখি।

শেষাংশ
ঈদ-উল-ফিতর-এ এই ১০টি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রতিটি স্বতন্ত্র বিষয়বস্তু ও নাট্যধারাকে প্রতিনিধিত্ব করছে। তন্মধ্যে ব্যবসায়িক সিনেমা হিসেবে অন্য সবগুলোর থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকছে শাকিব খানের রাজকুমার মুভি। এই তালিকার দ্বিতীয় ব্যবসায়িক চলচ্চিত্রটি “মায়া: দ্যা লাভ”। ফেরদৌস-পূর্ণিমা জুটির ভক্তরা আলাদা ভাবে চোখ রাখবেন “আহারে জীবন” ছবিতে।

এছাড়া বাকি সবগুলোতেই থাকছে নিরীক্ষা ও তথাকথিত নির্মাণশৈলীর বাইরে শিল্পের ছোঁয়া। এগুলোর মধ্যে রয়েছে “কাজলরেখা”, “লাস্ট ডিফেন্ডার অব মনোগামী”, “ওমর” ও “দেয়ালের দেশ”। ক্রাইম-ড্রামা “মেঘনা কন্যা” এবং থ্রিলার “এশা মার্ডার: কর্মফল” দারুণ কিছু নাটকীয়তার প্রত্যাশা রাখছে। পরিশেষে, ভৌতিক মুভি “মোনা: জ্বীন-২”-এর সংযোজন পরিপূর্ণ একটি প্যাকেজে পরিণত করেছে বড় পর্দার এবারের ঈদ আয়োজনকে।