‘ঈদআনন্দ নয়, রাজশাহীর অনেক ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের ঘরে নেমে আসবে দুর্ভোগ’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাদশা ইসলাম। রাজশাহীর নিউমার্কেটের হকার্স মার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী হিসেবে আছেন প্রায় ১২ বছর ধরে। বেতন তাঁর ৯ হাজার টাকা। তবে করোনা আতঙ্কের কারণে দোকান বন্ধ থাকায় গত প্রায় দুই মাস ধরে বেতন পাননি তিনি। এই অবস্থায় সংসার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বাদশা। ঈদের আগে দোকান খুলে ব্যবসা করতে পারলে হয়তো মালিক খুশি হয়ে কিছু বাড়তি টাকা হাতে ধরিয়ে দিবে বাদশরা। এই আশায় গতকাল সকালেও এসেছিলেন দোকানের সামনে। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন গতকালও কোনো দোকানপাট খুলতে দেয়নি। ফলে অনেকটা বিষন্ন মন নিয়েই সকাল ১১টার দিকে নিউমার্কেটের সামনে ফুটপাতে বসেছিলেন বাদশা।

তিনি বলেন, ‘আর কতদিন বসে থেকে খাবো, আমাদের কে খেতে দিবে? দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসা বন্ধ। মালিকও বেতন দিতে পারছেন না। তাহলে আমরা যাবো কোথায়? কি খেয়ে থাকবো। ঈদের আনন্দ নয়, দোকান খুলতে না পারলে আমাদের মতো কর্মচারীদের ঘরে ঘরে নেমে আসা দুর্ভোগ আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে। অনেককে ঈদের দিনেও না খেয়ে থাকতে হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে।’

এমন অবস্থা শুধু বাদশা ইসলামেরই নয়। রাজশাহীর কয়েক হাজার কর্মচারী গত প্রায় দুই মাস ধরে দোকানপাট খুলতে না পেরে খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা। সরকারি নির্দেশনার পরেও রাজশাহীতে করোনার আক্রমণ যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেদিক বিবেচনা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দোকানপাট না খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সদর আসনের সংসদ ফজলে হোসেন বাদশা এবং জেলা প্রশাসক হামিদুল হকের সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের যৌথ সভা শেষে এ নির্দেশনা দেওয়া হয় প্রশাসন থেকে। ফলে রাজশাহীতে কার্যত এখনো দোকানপাট বন্ধই আছে। তবে কিছু কিছু দোকান মালিক বাইরে কর্মচারীদের দাঁড় করিয়ে ভিতের দরজা বন্ধ রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন গোপেন।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  করোনার মতো মরণভাইরাস থেকে রাজশাহী নগরীর মানুষকে ভালো রাখতে দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি হলো যুগোপযোগী। এর কোনো বিকল্পও নাই। কিন্তু যেসব ছোট ছোট ও মধ্যম শ্রেণির দোকান মালিক রয়েছেন এবং কর্মচারী রয়েছেন তাদের পাশে এখনোই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে এই শ্রেণির মানুষদের কষ্টের সীমা থাকবে না।’

এদিকে সিল্কসিটিনিউজের জরিপেও উঠে আসে এখনোই রাজশাহী নগরবাসী চান না দোকানপাট খুলে দেওয়া হোক। গত শনিবার থেকে চালানো অনলাইন এ জরিপে প্রায় ৯৯ ভাগ মানুষই দোকানপাট বন্ধ রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। অনেকেই প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ মতামত দিয়েছেন, দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি ভালো, কিন্তু ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের জন্য কি উদ্যোগ নিল সিটি করপোরেশন?

এদিকে দোকানপাট খুলে রাখার দাবিতে গতকাল দুপুরে আবারও বিক্ষোভ করেছেন নগরীর সাহেববাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা। এর আগের দিনে নগরীর নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেন। গতকাল দুপুরে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে গিয়ে দোকান খোলার জন্য অনুমতিও চান।


দুপুরে বিক্ষোভ করার সময় দোকান মালিকদের মধ্যে আকবর হোসেন নামের দাবি করেন, দোকান খুলতে না পারায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। দিনের পর দিন দোকান বন্ধ রেখে তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিতে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। কারণ অনেক ব্যবসায়ী মধ্যবিত্ত। তাদের জমানো তেমন টাকাও নাই বাড়িতে। যা আয় হয় প্রতিদিন বেচা-কেনা শেষে। কিন্ত করোনাভাইরাসের কারণে দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসাও বন্ধ।

 

এখন বেচাকেনা না থাকায় বাড়ির বাজার করারও অর্থ নাই অনেকের পকেটে। এর মধ্যে যারা দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁরা পড়েছেন আরো গভীর সঙ্কটে। দুর্যোগের এই সময়েই দোকান ভাড়া পরিাশোধ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে দোকান ভাড়া পরিশোধ করবেন, নাকি কর্মচারীদের বেতন দিবেন, না সংসার চালাবেন-এমন শঙ্কটে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকেই পূঁজি হারিয়ে পথে বসতে চলেছেন।

আরেক ব্যবসায়ী স্বপন বলেন, ‘আগামী ঈদুল ফিতরের ঈদ উপলক্ষেও যদি তারা দোকান খুলতে না পারেন, তাহলে রাজশাহীর অনেক ব্যবসায়ী একেবারেই পথে বসবেন। বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হবে ঈদের মার্কেট ধরতে না পারলে।  আশেপাশের জেলারগুলোতে এরই মধ্যে  দোকানপাট খুলে  দেওয়া হয়েছে। সেইদিক থেকেও পিছিয়ে পড়বে রাজশাহী। এই অবস্থায়  রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে দ্রুত সরকারি প্রণোদনা বা  দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিতে হবে।’

নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার চা দোকানদার দুলাল হোসেন বলেন, দুই মাস ধরে দোকান বন্ধ। এখন কি খাবো। ব্যবসা করি বলে কেউ তো ত্রাণও দেয় না। কিন্তু চা-বিক্রি করে কত টাকায় আর আয় হয় যে, দিনের পর দিন ঘরে বসে খেতে পারব। যার কারণে এবারের ঈদের আনন্দ থাকবে না আমার ঘরে। দুইমুঠ ভাত যদি ঠিকমতো খেতে পারি, তাতেই আনন্দ পাব।’

স/আর

 

আরও পড়ুন:

মার্কেট বন্ধ থাকুক, চান রাজশাহীর ৯৯ ভাগ মানুষ-সিল্কসিটি নিউজের জরিপ

দোকান খোলার দাবিতে রাজশাহীতে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের বিক্ষোভ