ইসলাম ধর্ম অবমাননা: নাইজেরীয় কিশোরের হয়ে সাজা খাটার প্রস্তাব পোলিশ ঐতিহাসিকের

ইসলাম ধর্মের অবমাননার দায়ে নাইজেরিয়ার আদালত ১৩বছর বয়সী এক কিশোরকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার পর পোল্যান্ডের একজন ঐতিহাসিক প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি এবং আরও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী পালা করে তার সাজার মেয়াদ খাটতে রাজি আছেন।

পোল্যান্ডের আউশভিৎস স্মৃতি যাদুঘরের পরিচালক ঐতিহাসিক ড. পিওতর সিউইনস্কি বলেছেন তিনি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১১৯ জন স্বেচ্ছাসেবী ওই কিশোরের হয়ে প্রত্যেকে এক মাস করে কারাগারে সাজা খাটতে রাজি আছেন।

তিনি ওই কিশোরকে ক্ষমা করে দেবার জন্য নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারিকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছেন।

নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কানো প্রদেশে অগাস্ট মাসে এক বন্ধুর সাথে তর্ক করার সময় ওই কিশোর আল্লাহর প্রতি অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেছিল এই অভিযোগে দেশটির শরিয়া আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

ছেলেটির আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে এ মাসের গোড়ার দিকে আপিল দায়ের করেছেন এই যুক্তি দেখিয়ে যে তার দণ্ডাদেশ শিশু অধিকার ও নাইজেরিয়ার সংবিধান লংঘন করেছে। আইনজীবী বলেছেন এই আপিলের শুনানির জন্য কোন তারিখ এখনও পর্যন্ত ধার্য করা হয়নি।

“এই রায় শিশু অধিকার ও শিশু কল্যাণ বিষয়ক আফ্রিকান সনদের লংঘন এবং নাইজেরিয়া প্রজাতন্ত্র যে কেন্দ্রীয় সংবিধান দ্বারা পরিচালিত তারও লংঘন,” বলেছেন কিশোরের আইনজীবী কোলা আলাপিন্নি।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফও আদালতের এই রায় জরুরি ভিত্তিতে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে।

নাইজেরিয়ার ধর্মনিরপেক্ষ আইনের পাশাপাশি যে ১২টি প্রদেশে ইসলামী শরিয়া আইন ব্যবস্থাও চালু রয়েছে তার একটি হলো কানো প্রদেশ।

দেশটির উত্তরাঞ্চলে সর্বাধিক সংখ্যক মুসলমানের বাস।

 

কানোর মুসলিম বাসিন্দারা

পোলিশ ইতিহাসবিদ কী বলেছেন?

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্টকে লেখা চিঠিতে ড. সিউইনস্কি বলেছেন তিনি নিজে ওই কিশোরের কারাদণ্ড ভাগ করে নিতে রাজি আছেন।

”ওই কিশোরের বয়স বিবেচনায় নিয়ে ধরে নেয়া যেতে পারে, সে যা বলেছে, তা জেনে বুঝে বা পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলেনি।

”এ কারণে তার পুরো যৌবনকাল সে কারাগারে কাটাক এই সাজা তাকে দেয়া উচিত হবে না। এ কারণে সে বাকি জীবন সুযোগ বঞ্চিত হয়ে থাকবে, শারীরিক ও মানসিকভাবে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রেও তাকে একটা কলঙ্কিত জীবন কাটাতে হবে।

”তবে, যদি আইনের বিচারে শেষ পর্যন্ত তার সাজা বহাল থাকে, এবং তার কথার জন্য তাকে ১২০ মাস কারাগারে কাটাতেই হয়, এবং আপনি যদি এই রায় বদলাতে অপারগ হন, তাহলে আমার প্রস্তাব হলো- আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১২০ জন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক জোগাড় করব, যারা স্বেচ্ছায় ওই কিশোরের হয়ে সাজার মেয়াদ খাটবে। এই ১২০ জনের মধ্যে একজন হবো আমি। এবং এই ১২০ জন প্রত্যেকে এক মাস করে নাইজেরিয়ার কারাগারে জেল খাটবো।

”এতে ওই কিশোরের অপরাধের মূল্য একই থাকবে, শুধু জেলখানার ভেতর তাকে পুরো দশ বছর কাটানোর ভয়াবহতা আমরা এড়াতে পারবো,” তার চিঠিতে লিখেছেন ড. ড. সিউইনস্কি।

এধরনের কোন ঘটনায় আউশভিৎস যাদুঘরের মত প্রতিষ্ঠানের মন্তব্য খুবই বিরল।

এ নিয়ে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য করেননি।

আউশভিৎস-বার্কেনাউ মেমোরিয়াল অ্যান্ড মিউজিয়াম নামে এই স্মৃতি যাদুঘরটি পোল্যান্ডে যেখানে নাৎসীদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প ছিল সেই স্থানে অবস্থিত। সারা ইউরোপ থেকে হিটলারের বাহিনী এসএসের সদস্যরা ইহুদিদের ধরে ধরে যেসব ক্যাম্পে পাঠাতো, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মৃত্যু ক্যাম্প ছিল পোল্যান্ডের এই ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে অন্তত ১১ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে প্রায় দশ লাখ ছিল ইহুদী।

নাইজেরিয়ায় শরিয়া আদালত কীভাবে কাজ করে

বিবিসি নিউজ, কানোর সংবাদদাতা মনসুর আবুবাকার জানাচ্ছেন নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে মুসলিম অধ্যুষিত ১২টি প্রদেশে শরিয়া আইন ব্যবস্থা রয়েছে।

এই শরিয়া আইন ব্যবস্থার অধীনে তাদের নিজস্ব আপিল আদালতও আছে। এই আদালতে মুসলমানরা ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা দায়ের করতে পারেন। এবং এই আদালতের রায়কে নাইজেরিয়ার ধর্মনিরপেক্ষ আপিল আদালতে এবং দেশটির সুপ্রিম কোর্টেও চ্যালেঞ্জ জানানো যায়।

শরিয়া আদালতের বিচারকরা “আলকালিস” নামে পরিচিতি। তারা ইসলাম এবং অন্য ধর্ম বিষয়েও পণ্ডিত।

কোন ঘটনায় যদি মুসলিম এবং অমুসলিম দুই ধর্মের মানুষ জড়িত থাকেন, তাহলে তারা কোন আদালতে তাদের মামলা নিয়ে যাবেন সেটা বেছে নেবার স্বাধীনতা তাদের আছে। যারা মুসলিম নন, তারা যদি তাদের মামলা শরিয়া আদালতে নিতে চান, তাহলে তাদের সে ব্যাপারে লিখিতভাবে অনুমতি দেবার বিধান রয়েছে।

এই আদালতের সাজার এখতিয়ারে রয়েছে বেত্রাঘাত, হাত-পা কেটে দেয়ার শাস্তি এবং মৃত্যুদণ্ড।

 

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা