ইচ্ছা করে রাসিকের বৈদ্যুতিক লাইট নষ্ট, জড়িত থাকতে পারেন রাঘব বোয়ালরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে সড়কের বাতি নষ্ট করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় রাসিক কর্মকর্তারা বেকায়দায় পড়ে গেছেন।

রাসিক সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের স্ট্রিট লাইট মিস্ত্রি মিজানুর রহমান ওরফে শাহীন (৪০) ইচ্ছে করে ভোল্টেজ বাড়িয়ে দিতেন। যেন দামি বাতিগুলো দ্রুত নষ্ট হয়। এভাবে বছরের পর বছর ধরে বাতিগুলো ইচ্ছে করে পুড়িয়েছেন শাহীন। এ অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

এ মামলায় শাহীনের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকার সড়কবাতি ইচ্ছে করে নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত শাহীনকে গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। শাহীনের বাড়ি নগরীর নতুন বিলশিমলা এলাকায়। তাঁর বাবার নাম খলিলুর রহমান।

তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাসিকের ক্রয় কমিটির কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারেন। যেন তাড়াতাড়ি অতিরিক্ত দামে বাতি কিনে কোটি কোটি টাকা পকেটে ঢোকানো যায়। এ কারণে দামি লাইটগুলো নষ্টের পেছনে রাঘব বোয়ালরাও জড়িত থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। ফলে ব্যবহৃত বাতিগুলোর বাজারমূল্য এবং দরপত্রমূল্য যাচাই করার দাবি জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, দুটি কারণে শাহীন সড়কবাতি পোড়াতে পারেন। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বারবার বাতিগুলো নষ্ট করা। যেন ঠিকাদার আবারও বাতি সরবরাহ করতে পারেন। এ ছাড়া আগের যে ঠিকাদার বাতি সরবরাহ করেছেন তাঁর মান খারাপ প্রমাণের চেষ্টা। এটি পুলিশ তদন্ত করবে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, একই সড়কে বারবার বাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মিস্ত্রিরা বলছিলেন অতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে বাতি পুড়ে যাচ্ছিল। আর বিদ্যুৎ বিভাগ বলছিল, অতিরিক্ত ভোল্টেজ ছিল না। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় গেল বছরের ১১ সেপ্টেম্বর নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ উদ্ঘাটন করেছে যে লাইটগুলো ইচ্ছে করেই নষ্ট করতেন শাহীন। তাঁর এমন কাণ্ডের সাক্ষীও পাওয়া যায়। এরপর তাঁকে আটক করা হয়। পরে সিটি করপোরেশন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৪ মার্চ দুপুরে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় পাঁচটি এলইডি বাতি পোড়ানো হয়েছে। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড় পর্যন্ত ১৫টি বাতি পোড়ানো হয়েছে। নগরীর কাদিরগঞ্জ বড় মসজিদের সামনে থেকে বর্ণালী মোড় পর্যন্ত বাতিগুলো তিন-চারবার পোড়ানো হয়েছে। শালবাগান থেকে বিজিবি গেট হয়ে আলিফ-লাম-মিম ভাটা পর্যন্ত বাতিগুলোও তিন-চারবার পোড়ানো হয়েছে। দেবিশিংপাড়া আরএইচ ছাত্রাবাস থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত বাতিগুলো পোড়ানো হয়েছে সাত-আটবার। পাঁচ-সাতবার পোড়ানো হয়েছে ডাবতলার মোড় থেকে তেরখাদিয়া পর্যন্ত রাস্তার বাতিগুলো। গোরহাঙ্গা কামারুজ্জামান চত্বর থেকে শিরোইল বাস টার্মিনাল পর্যন্ত বাতিগুলো পোড়ানো হয়েছে ১০-১২ বার।

এছাড়া গত বছরের ৩ অক্টোবর নগরীর দড়িখড়বোনা থেকে বর্ণালী মোড় পর্যন্ত রাস্তার উত্তর পাশে আটটি এবং দক্ষিণ পাশে ১৮টি বাতি পোড়ানো হয়েছে। একই দিন এ এলাকার আইল্যান্ডের মাঝের সৌন্দয্যবর্ধক ২০টি বাগানবাতি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৪ এপ্রিল তালাইমারী শহীদ মিনার থেকে বাদুড়তলা পর্যন্ত ৩১টি বাতি পোড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার বাতি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা বলেও মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ইচ্ছেমত রাসিকের বৈদ্যুতিক লাইট নষ্টকারী কর্মচারী আটক

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, রাসিকের লাগানো বাতিগুলো ২৯০ ভোল্ট পর্যন্ত সহনশীল। সাধারণত প্রতিটি ফেজ ২২০ ভোল্ট সরবরাহ করে। কিন্তু মই লাগিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে মূল ফেজের সঙ্গে আবাসিক যুক্ত করে ৪৪০ ভোল্ট দিয়ে লাইটগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মামলার সাক্ষীরা মিস্ত্রি শাহীনকে এ কাজ করতে দেখেছেন। তাঁরা বাধা দিতে গেলে শাহীন বলেছেন, ওপরের নির্দেশ আছে। নতুন বাতি লাগানো হবে। এভাবে একটি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে তিনি কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। এতে একটি গোষ্ঠীর লাভ হয়েছে।

নগরীর বোয়ালিয়া থানার পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘কাউকে না কাউকে লাভবান করতেই রাসিকের মিস্ত্রি শাহীন ইচ্ছে করেই বাতিগুলো পুড়িয়েছেন। কার কথায় তিনি এমন করেছেন তার তদন্ত চলছে। মামলায় আপাতত শাহীনকেই আসামি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় এই ক্ষতির পেছনে তাঁর সঙ্গে যার যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।’

স/আর