আড়ানী উচ্চবিদ্যালয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপনের মঞ্চসহ সকল কাজ সম্পন্ন

বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চবিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের মঞ্চসহ সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামিকাল শুক্রবার এই বর্ষপূর্তির মিলন মেলার উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, রাজশাহী-৫ আসনের সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ দারা, নটোর-১ আসনের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ও কথা সাহ্যিত হাসান আজিজুল হক।

বিদ্যালয়ের ১৯৭০ ব্যাচের প্রাপ্তন ছাত্র, এলজিআরপি মন্ত্রনালয়ের অবসরপ্রপ্ত যুগ্ম সচিব, এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক, ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন কমিটির আহবায়ক শফিকুল ইসলাম মকুট জানান, ৪০/৩০ ফুট মঞ্চ, তিন হাজার আসন, অতিথিদের সংবর্ধণা কমিটি, ফেস্টুন, ব্যানার, তরুণ, আলোক সজ্জা, কিছু ব্যাচ ভিক্তিক আলাদাভাবে স্টল নির্মানসহ সকল কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

জানা যায়, রাজশাহী শহর থেকে ৩৯ কিলোমিটার পূর্বদিকে এবং বাঘা উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর দিকে বড়াল নদীর ধারে একটি মনোরম পরিবেশে ১৮৬৫ সালে আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়। বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একশ দুই বছর পর ১৯৬৩ সালে দোতালা ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৮৬৫ দশকের দিকে নাম করণ করা হয় আড়ানী। ওই সময় থেকে আড়ানী ছিল হিন্দু সম্প্রদায় এলাকা। এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস তুলনা মুলক অনেক।

রানীমাতা ও তাঁর স্বামী মনোমোহিনী প্রচেষ্টায় ১৮৫৭ সালে প্রথমে খেড়ের দু’চালা ঘরে মক্তব শুরু করা হয়। পরে ১৮৬৫ সালে দুইজন বিদ্যানুরাগী দিয়ে অত্র এলাকার পরেশ নারায়ন মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বাংলা স্কুলের যাত্রা শুরু করেন। প্রায় ২৫ বছর যাবত স্কুলটি রাজা পরেশ নারায়নের নেতৃত্বে চলে। ১৯০০ দশকের দিকে স্কুলটি নিন্মমাধ্যমিকে পরিনত হয়। তাঁর কয়েক বছরের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ সময় বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। আড়ানী মনোমোহিনী ইংলিশ নামকরণ করা হয়।

১৯১৬ সালে ইংলিশ শব্দ বাদ দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্থায়ী অনুমোদন লাভ করেন। স্কুল থেকে ১৯২১ সালে ১২ জন শিক্ষার্থী প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন। ১৯২৭ সালে বৃট্রিশ শাসনামলে বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী অনুমোদন লাভ করে। ১৯৩৮ সালে বর্তমান অফিস কক্ষটি অত্র এলাকার আরেক শিক্ষানুরাগী বসন্ত কুমার শাহা এর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মান করে দেন।

১৯৬৩ সালে অফিস কক্ষের পাশে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট দোতালা ভবন মরহুম স্থানীয় শিক্ষানুরাগী প্রকাশ চন্দ্র চক্রবতির আর্থিক সহায়তায় নির্মান করা হয়। ভবনটি ১৯৭১ সালে ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেন মুক্তিযোদ্ধারা। বর্তমানে ভবনটি পরিত্যক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দেড়শত বছরের পুরোনো আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে সাড়ে আট শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ২৫ জন।

এলাকাবাসি অনুষ্টানের প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, রাজশাহী-৫ আসনের সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ দারা, নটোর-১ আসনের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ এর কাছে জনমানুষের সার্বিক সুবিধার্থে আড়ানীকে উপজেলা ঘোষণা, রাজশাহী-ঢাকা, রাজশাহী-খুলনা এবং রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটের আন্ত:নগর ট্রেন আড়ানী রেল ষ্টেশনে স্থায়ী ষ্টোপেজের ব্যবস্থা, পৌর হাট-বাজারের উন্নয়নে নতুন মার্কেট নির্মান, পৌর এলাকার সীমানা বৃদ্ধিতে বড়াল নদীর পশ্চিম পাশে রামচন্দ্রপুর ও বাসুদেবপুর মৌজার ৩০০ একর জমি পৌরসভায় অন্তর্ভূক্ত করন, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করন, আলহাজ্ব এরশাদ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজটিকে ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিও ভূক্তি করন, আড়ানী ডিগ্রী কলেজে অনার্স কোর্স চালুসহ কারিগরী কলেজে পরিবর্ধন করন, নির্মানাধীন পুলিশ ষ্টেশনকে অনতি বিলম্বে চালুর ব্যবস্থা, আড়ানী সার্বজনীন কালী মন্দিরটির উন্নয়ন বাস্তবায়ন, তফসিল অফিসের ভবন নির্মানসহ সাবরেজিষ্ট্রার অফিস চালু করন, আড়ানী বড়াল নদী সংলগ্ন খাস জমিতে বিশেষত ডিগ্রি কলেজের পশ্চিম পাশে বিনোদন পার্ক নির্মান ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য শিশু একাডেমি নির্মানের ব্যবস্থা, আড়ানীর খেলা-ধুলার মানউন্নয়নের বিশেষ কোচের ব্যবস্থা করন, পৌরসভা উন্নয়নের প্রান কেন্দ্র আড়ানী পৌরসভার নতুন ভবন নির্মান, আড়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষ নির্মানসহ প্রাচীর নির্মানের দাবি করেন।

বিদ্যালয়ের ১৯৭৭ সালের ব্যাচ প্রাপ্তন ছাত্র আজিবর রহমান বলেন, আমি আমিরিকার স্থায়ী নাগরিক। এতো বড় বিলন মেলা থেকে আমি বঞ্চিত হতে চায় না। পুরাতন বন্ধ-বান্ধবদের সাথে দেখা-কথা বার্তার জন্য ছুটে এসেছি।

১৯৮৪ ব্যাচের প্রাপ্তন ছাত্র ঢাকা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল লতিফ বলেন, প্রানের টানে ছুটে এসেছি ১৫০ বছর পূর্তি অনুষ্টানে যোগ দেয়ার জন্য।
স/শ